পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেবার ওকাকুরা ভারতবর্ষ ঘুরে ঘুরে দেখবেন। অনেক জায়গা ঘোর হয়ে গেছে, আর দু-চার জায়গা দেখা বাকি। বললুম, যাচ্ছ যখন, কোনারকের মন্দিরটা ঘুরে দেখে এসে একবার। নয় তো ভারতবর্ষের আসল জিনিসই দেখা হবে না। ওকাকুরা বললেন, ‘পুরীর মন্দিরও দেখবার বড়ো ইচ্ছে আমার । ব্যবস্থা করে দিতে পার ? তখন তিনি কঠিন রোগে ভুগছেন, ভাঙা শরীর; তাই নিয়েই এসেছেন বিদেশে বিভূয়ে ভারতের শিল্পকীতি দেখতে। জগন্নাথের ডাক পড়েছে আমার বিদেশী শিল্পী ভাইকে । কিন্তু জগন্নাথ ডাকেন তে ছড়িদার ছাড়ে না ; লাট-বেলাটকে পর্যন্ত বাধা দেয় এত বড়ো ক্ষমতা সে ধরে, তাকে কিভাবে এড়ানো যায় ? শিল্পীতে শিল্পীতে মন্ত্রণ বসে গেল। চুপিচুপি পরমর্শটা হল বটে, কিন্তু বন্ধু গেলেন জগবন্ধু দর্শন করতে দিনের আলোতে রাজার মতো। দ্বার খুলে গেল, প্রহরী সসন্মানে এক-পাশ হল, জাপানের শিল্পী দেখে এলেন ভারতের শিল্পীর হাতে-গড় দেবমন্দির, বৈকুণ্ঠ, আনন্দবাজার, মায় দেবতাকে পর্যন্ত । বড়ো খুশি হয়েছিলেন ওকাকুর সেবার কোনারক দেখে । বললেন, ‘কোনারক না দেখলে এবারকার আসাই আমার বৃথাহত। ভারতশিল্পের প্রাণের খবর মিলল আমার ওখানে।’ তার বিদায়ের দিনের শেষ কথা আমার এখনো মনে আছে, ধন্য হলেম, আনন্দের অবধি পেলেম, এইবার পরপারে স্বথে যাত্রা করি। দেশে ফিরে গিয়ে কিছুকালের মধ্যেই মারা যান ওকাকুরা। সেবারেই তিনি বলেছিলেন নন্দলালদের, দশ বছর আগে যখন আমি এসেছিলাম তখন তোমাদের আজকালকার আর্ট বলে কিছুই দেখি নি । এবারে দেখছি তোমাদের আর্ট হবার দিকে যাচ্ছে। আবার যদি দশ বছর বাদে আসি তখন হয়তো দেখব হয়েছে কিছু।" তিনিও আর এলেন না, আমিও বসে আছি দেখবার জন্যে—কই, দেখছি না তো। হয়তো আবার আমায় আসতে হবে। পথ আছে কি ? X6. ভারতবর্ষকে বিদেশী ধারা সত্যিই ভালোবেসেছিলেন তার মধ্যে নিবেদিতার স্থান সব চেয়ে বড়ো। বাগবাজারের ছোট ঘরটিতে তিনি থাকতেন, আমরা মাঝে মাঝে যেভূম সেখানে। নদলালদের কত ভালোবাসতেন, কত উৎসাহ ૨br૭