পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঠগড়ার মাঝে বসে, দূর থেকে দেখি তিনি একমনে লিখে চলেছেন। জামি আস্তে আস্তে গিয়ে দরজা ঠেলে ঢুকে গেলুম। তিনি বুঝলেন, মুখ না তুলেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দেখলে সব ঘুরে ঘুরে ? বললুম, হ্যা । ‘কী—কেমন দেখলে, কী মনে হল ? আমার তো এই রকমই কথাবার্তা— বললুম, সবই তো ভালো— ভালোই লাগল, তবে, একটা জিনিস দেখে এলুম— তোমার শিশু-বিভাগের মূলে কুঠারাঘাত হচ্ছে । বলতেই রবিকার চেয়ারটা ঘুরে গেল, কলম রেখে ঘাড় .বেঁকিয়ে তাকালেন আমার দিকে। সে কী চাহনি। এখনো চোখে ভাসছে। শাবককে খোচ দিলে সিংহী যেমন কটমট করে ভাকায় । রবিকা বললেন, ‘তার মানে ? কী বলতে চাও?’ বললুম, সত্যিই, আমার তো তাই মনে হল । তোমার এখানে শিশুর মুক্তি পাবে, মনের আনন্দে .শিখে চলবে, তা নয় এক জায়গায় বন্দী করে কাঠে পেরেক ঠোকাচ্ছে, খাচায় খরগোস দিয়ে বন্য জন্তুর চালচলন বোঝাচ্ছে, টবের গাছ দেখিয়ে ল্যাগুস্কেপ আঁকতে শেখাচ্ছে, একে মূলে কুঠারাঘাত বলব না তো কী বলব ? রবিক বললেন, তা তুমি ওদের কী বললে ? আমি বললুম যে, আমি ছেলেদের বলে এলুম – খাচায় তো খরগোস রেখেছিল— খাচার দরজাট একবার খুলে দে, খোলা মাঠে কেমন দৌড়য় খরগোস দেখবি, সে বড়ে মজা হবে। রবিক শুনে হার্সলেন, বললেন, ‘তুমি এ কথা বলেছ তো ? বেশ করেছ। তা অবন, তুমি আজই যাবে কী ? থেকে যাও-না। আমি নতুন গানে স্বর দিয়েছি। আজই গাওয়া হবে, তা না-শুনেই তুমি যাবে ? এ কেমন কথা । কন্তু থাকা আমার হল না। রেল ধরে বাড়িমুখে হলুম। সে রাত্রে গ্রহণ ছিল। ট্রেনে আসতে আসতে দেখলেম চাদে পূর্ণগ্রহণ লাগল। এ কথা যেন কোথায় কবে আমি লিখেছি মনে হচ্ছে। খুঁজে দেখো, সেই দিনই ওই গানে স্বর দেওয়া হয় ‘পূর্ণচাদের মায়ায় আজি ভাবনা আমায় পথ ভোলে’ । তারপর আস্তে আস্তে আমি জোড়াসাকোর বাড়িতে পৌঁছলুম, যেন ছাড়া পেয়েছিল যে একটা খরগোস সে এসে ফের ঘরের খাচায় ঢুকে লেটুস পাত; চিবোতে বসে গেল ।