বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাইপ টানছেন। উপরের ঘরে ছিলেন কর্তাস্তুদামশায় শুয়ে, চেচিয়ে উঠলেন, এ-ই। চাকর-বাকরের নাম ধরে কখনো ডাকতেন না, এ-ই বলে ডাকলেই সব ছুটে যেত। তিনি বললেন, গাজ খাচ্ছে কে। চাকররা তো ছুটোছুটি করতে লাগল বাড়িময়, খোজ খোজ, শেষে দেখে বড়োজ্যাঠামশায়ের ঘর থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে । এদিকে বড়োজ্যাঠামশায় তো এই-সব শুনে তক্ষুনি জানালা দিয়ে পাইপ-তামাক সব ছড়ে একেবারে বাইরে ফেলে দিলেন। কর্তাদাদামশায় যখন খবর পেলেন, বললেন, দ্বিজেন্দর তামাক খাবেন, তা খান-না, তবে পাইপ-টাইপ কেন । ভালো তামাক আনিয়ে দাও । কর্তাদাদামশায় মহর্ষি হলে কী হবে— এ দিকে শোঁখিন ছিলেন খুব । কোথাও একটু নোংরা সইতে পারতেন না। সব-কিছু পরিষ্কার হওয়া চাই। কিছুদিন বাদে-বাদেই তিনি ব্যবহারের কাপড়জামা ফেলে দিতেন, চাকররা সেগুলো পরত। কর্তাদাদামশায়ের চাকরদের যা সাজের ঘটা ছিল একেবারে ধোপ-দোরস্ত সব সাজ । ৰুর্তাদাদামশায় কখনো এই বৃদ্ধকালেও তোয়ালে দিয়ে গা রগড়াতেন না, চামড়ায় লাগবে । সেজন্য মসলিনের খান আসত, রাখা থাকত আলমারির উপরে, তাই থেকে কেটে কেটে দেওয়া হত, তারই টুকরো দিয়ে তিনি গ রগড়াতেন, চোখ পরিষ্কার করতেন। চাকররা কত সময়ে সেই মসলিন ੇ করে নিয়ে নিজেদের জামা করত । দীপুদা বলতেন, এই বেটারাই হচ্ছে কর্তাদা দামশায়ের নাতি, কেমন মসলিনের জামা পরে ঘুরে বেড়ায়, আমরা এক টুকরোও মসলিন পাই না— । আমরা কর্তাদাদামশায়ের নাতি কী আবার । দেখছিস না চাকর-বেটীদের সাজের বাহায় ? ঈশ্বরবাবু গল্প করতেন, একবার কর্তামশায়ের শখ হল, কল্পতরু হব । রব পড়ে গেল বাড়িতে, কর্তাদাদামশায় কল্পতরু হবেন । কল্পতরু আবার কী। কী ব্যাপার। সারা বাড়ির লোক এসে ওঁর সামনে জড়ো হল ! উনি বললেন, ঘর থেকে যার যা ইচ্ছে নিয়ে যাও। কেউ নিলে ঘড়ি, কেউ নিলে আয়না, কেউ নিলে টেবিল— । যে যা পারলে নিয়ে যেতে লাগল। দেখতে দেখতে ঘর খালি হয়ে গেল। সবাই চলে গেল। ঈশ্বরবাবু বললেন, বুঝলে ভাই, তোমার কর্তাদাদামশার তো কল্পতরু হয়ে খালি ঘরে এক বেতের চৌকির উপর বলে রইলেন । Ե Ց