পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্বেই সূচ-সূতা-প্যাটার্ন গুটািইয়া লইয়া বাড়ি চলিয়া গেল। পরদিন আসিল না এবং এই প্রথম প্রত্যহ আসায় তাহার ব্যাঘাত হইল । দিন-চারেক পরে আবার একদিন হরিলক্ষ্মী তাহার সূচ-সূতার বাক্স হাতে করিয়া এ বাটিতে আসিয়া উপস্থিত হইল । মেজবীে তাহার ছেলেকে রামায়ণ হইতে ছবি দেখাইয়া দেখাইয়া গল্প বলিতে ছিল, সস স্লাম উঠিয়া আসন পাতিয়া দিল । উদ্বিগ্নকণ্ঠে প্রশ্ন করিল, দু-তিন দিন আসেন নি, আপনার শরীর ভাল ছিল না বুঝি ? লক্ষ্মী গম্ভীর হইয়া কহিল, না, এমনি পাঁচ-ছ'দিন আসতে পারিনি । মেজবৌ বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলিল, পাচ-ছদিন আসেন নি ? তাই হবে বোধ হয়। কিন্তু আজি তা হলে দু’ঘণ্টা বেশী থেকে কামাইট পুষিয়ে নেওয়া চাই । লক্ষ্মী বলিল, হু । কিন্তু অসুখই যদি আমার করে থাকত মেজবেী তোমার ত একবার খোজ করা উচিত ছিল । মেজবৌ সলজে বলিল, উচিত নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু সংসারের অসংখ্যা রকমের কাজ-একলা মানুষ কাকেই বা, পাঠাই বলুন ? কিন্তু অপরাধ হয়েছে, তা স্বীকার করা চি দিদি } লক্ষ্মী মনে মনে খুশী হইল ; এ কয়দিন সে অত্যন্ত অভিমানবশেই আসতে পারে নাই, অথচ অহনিশি যাই যাই করিয়াই তাহার দিন কাটিয়াছে। এই মেজবীে ছাড়া শুধু গৃহে কেন, সমস্ত গ্রামের মধ্যেও আর কেহ নাই, যাহার সহিত সে মন খুলিয়া মিশিতে পারে। ছেলে নিজের মনে ছবি দেখিতেছিল । হরিলক্ষ্মী তাহাকে ডাকিয়া কহিল, নিখিল, কাছে এস আিত বাবা ? সে কাছে আসিলে লক্ষ্মী বাস্তু খুলিয়া একগাছি সরু সোনার হার তোহার গলায় পরাইয়া দিয়া বলিল, যাও, খেলা কর গে । মায়ের মুখ গম্ভীর হইয়া উঠিল ; সে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি ওটা দিলেন নাকি ? লক্ষ্মী স্মিতমুখে জবাব দিল, দিলাম। বৈ কি? >气