পাতা:অভিযাত্রিক - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R নীয়াদ উত্তর দিলে---সাত পয়সা । তার মধ্যে একটা পয়সা পান। খাওয়ার জন্যে রাখে-ছ’পয়সা । আমি তখন তাচ্ছিল্যের সুরে বললুম-চিড়ে মুডকিই দাও। তবে ছ’পয়সার ও বরং ভালো, এসব জায়গায় বাজে ঘি তেল খেতে খেতে ময়রাকে জিগ্যেস করা গেল, তোমাদের এখানে এত ডোবা আর জঙ্গল, ম্যালেরিয়া আছে নাকি ? ময়রা আমাদের জন্যে তামাক সাজতে সাজতে বললে--ম্যালেরিয়ার্স উচ্ছন্ন গেল সব বাবু, আর আপনি বলেন আছে নাকি ? ভেতরে ঢুকে দেখুন কি অবস্থা গায়ের । বেলা পড়ে এলে আমরা গ্রামের মধ্যে ঢুকলুম। বাংলায় ম্যালেরিয়াবিধব্যম্ভ দরিদ্র গ্রামের এমন একখানি ছবি সেই আসন্ন হেমন্তসন্ধ্যায় সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিলাম, যা চিয়দিন আমার মনে আঁকা রয়ে গেল। ছবি নিরাশার, দুঃখের অপরিসীম। নিঃসঙ্গতার ও একান্তু দারিদ্র্যের । সেই বনজঙ্গলে ভরা গ্রামখানির ওপর ধ্বংসের দেবতা যেন উৎপুড় হয়ে পড়ে আছেন, তঁর কারাল কালো ডানার ছায়ায় সারা গ্রাম অন্ধকায় । আমাদের মন কেমন দমে গোল-ষেন। এখান থেকে পালাতে পারলেই বাচি । একটা ডোবার ধারে জনৈকা গ্রাম্যবধূকে বাসন মাজতে দেখলুম। পথের ধারে অন্ধকার পুকুরটা-সরু, হাতচুটি ঘুরিয়ে মেয়েটি বাসন মাজচে, পরনে মলিন কাপড়, অথচ গায়ের রং দেখে মনে হয় সে উচ্চবর্ণের গৃহস্থের কুলবধু। বাংলার মেয়েদের শত কষ্টের কথা মনে পড়ে গেল ওকে দেখেবাংলার সমস্ত নিপীড়িত অভাগিনী বধুদের ও যেন প্রতিনিধি। এক জায়গায় একটা পাঠশালা বসেচে । তার একদিকে শিবমন্দির । পাঠশালার ছেলেরা ছুটির আগে সারবন্দী হয়ে দাড়িয়ে সমন্বয়ে নামতী পড়চে । একটা ছেলেও স্বাস্থ্যবান নয়, প্রত্যেকের মুখ হলদে, পেট মোটা