করেছিলেন সে সব ছিল হিস্টিরিয়া রোগেরই অভিব্যক্তি, অথবা নিজেকে অন্যদের চেয়ে বিশিষ্ট, শ্রদ্ধেয় বলে প্রচার করার মানসিকতায় তিনি ইচ্ছে করেই পুরো ব্যাপারটা অভিনয় করছিলেন।
প্রাচীন যুগ থেকেই হিস্টিরিয়া রোগকে মানুষ অপার্থিব বলেই মনে করতেন। রোগের উপসর্গকে মনে করা হত ভূত বা ঈশ্বরের ভরের বহিঃপ্রকাশ। এ যুগেও সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে এখনও অনেক ক্ষেত্রেই হিস্টিরিয়া রোগী পূজিত হয় ঈশ্বরের প্রতিভূ হিসেবে। সাধারণভাবে অশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত বা প্রগতির আলো থেকে বঞ্চিত সমাজের মানুষদের মধ্যেই এই ধরনের হিস্টিরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। সাধারণভাবে এই শ্রেণির মানুষদের মস্তিষ্ককোষের স্থিতিস্থাপকতা বা সহনশীলতা কম। যুক্তি দিয়ে বিচার করে গ্রহণ করার ক্ষমতা অতি সীমিত। বহুজনের বিশ্বাসকে অন্ধভাবে মেনে নিতে অভ্যস্ত। মস্তিষ্ককোষের সহনশীলতা যাদের কম তারা এক নাগাড়ে একই ধরনের কথা শুনলে বা ভাবলে অনেক সময় মস্তিষ্কের কার্যকলাপে বিশৃঙ্খলা ঘটে। একান্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস বা ভূতে বিশ্বাসের ফলে রোগী ভাবতে থাকে তার শরীরে ঈশ্বরের বা ভূতের আবির্ভাব হয়েছে, ফলে রোগী ঈশ্বর বা ভূতের প্রতিভূ হিসেবে অদ্ভুত সব আচরণ করতে থাকে।
‘ভূত-ভর’ প্রসঙ্গে এই নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আগে করা হয়েছে। তাই পাঠকদের একই ধরনের কথা বলে তাঁদের ধৈর্যের উপর অত্যাচার করার চেষ্টা থেকে নিজেকে বিরত করলাম। বরং এখানে একটি গণহিস্টিরিয়ার উদাহরণ তুলে দিচ্ছি।
হিস্টিরিয়া যখন ভর
১৯৬৬ সালের মে মাসের ২৭ তারিখ। স্থান—রাঁচীর উপকণ্ঠের পল্লি। সময়- সন্ধ্যা। নায়িকা একটি কিশোরী। প্রচণ্ড মাথা দোলাতে দোলাতে শরীর কাঁপাতে-কাঁপাতে কী সব আবোল-তাবোল বকতে লাগল।
সন্ধেবেলায় জল বয়ে আনার পরই এমনটা ঘটেছে, নিশ্চয়ই ভূতেই ধরেছে। বাড়ির লোকজন ওঝাকে খবর দিলেন। ওঝা এসে কাঠকয়লায় আগুন জ্বেলে তাতে ধুনো, সরষে আর শুকনো লঙ্কা ছাড়তে শুরু করল, সঙ্গে নানা অঙ্গভঙ্গি করে মন্ত্র পাঠ। মেয়েটি কঠিন গলায় ওঝার ওইসব কাজ-কর্মে বিরক্তি প্রকাশ করল। ওঝা দেখলে ভর করা ভূতের চিরকালই ক্ষুব্ধ হয়। অতএব ভূতের রাগে ওঝার উৎসাহ তো কমলই না, বরং দ্বিগুণ উৎসাহে