পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সম্মােহন-আত্মসম্মােহন
১৪৫

ঘুমের গুরুত্ব মানুষের জীবনে অসীম। পনেরাে-কুড়ি দিন না খেয়ে থাকলে শরীর দুর্বল হয় বটে, কিন্তু সাধারণত মানসিক ভারসাম্যের অভাব হয় না। অথচ, পনেরাে-কুড়ি দিন সম্পূর্ণ না ঘুমিয়ে কাটালে প্রায় ক্ষেত্রেই মানসিক ভারসাম্যের অভাব ঘটে।

 আপনাদেরই পরিচিত এমন দু-একজন হয়তাে আছেন যাঁরা মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর অনিদ্রা রােগে ভুগছেন। শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক শ্রীবিমল মিত্র সুদীর্ঘ বছর অনিদ্রা রােগে ভুগেছেন। আপনাদের মনে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারবে, এত দীর্ঘ অনিদ্রার পরেও এঁদের প্রত্যেকেরই মানসিক ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন কীভাবে?

 না, আগে আমি যা বলেছি, সেটা মিথ্যে বলিনি। আবার, আপনারা যা দেখেছেন তাও মিথ্যে নয়। অনিদ্রারােগ’ মস্তিষ্কের বিশেষ অসুস্থ অবস্থা। এই বিশেষ অবস্থায় মস্তিষ্কের অনেকগুলাে কোষ দিনের ১৭/১৮ ঘণ্টা প্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। রাতে ৬/৭ ঘণ্টা কোষগুলাে গভীর ঘুম দিয়ে বিশ্রাম নেয় এবং সজীব ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। অধিকাংশ অনিদ্রা রােগে গভীর ঘুম হয় না বটে, কিন্তু আধা-ঘুমন্ত অবস্থার মধ্যে একটা সময় কাটে। এই সময়টায় মস্তিষ্ককোষ তাদের প্রয়ােজনীয় বিশ্রাম নিয়ে নেয়, ফলে মস্তিষ্ককোষের বিশেষ কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয় না। এই ধরনের আধাঘুম অবস্থায় আমরা সুস্থ মানুষরা অনেক সময় কাটাই। বাসে, ট্রামে, ট্রেনে অথবা ইজিচেয়ারে বিশ্রাম নিতে নিতে অথবা নেহাতই অফিসের চেয়ারে বসে অনেক সময় ঘুম আর জাগরণের মাঝামাঝি একটা অবস্থায় থাকি। মনােবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থার নাম hypnoid State' অনিদ্রা লােগ এই ‘hypnoid State'-এরই দীর্ঘতম অবস্থা।

পাভলভ কী বলেন

 পাভলভীয় বিজ্ঞানে ঘুমিয়ে-পড়া থেকে জেগে ওঠার মধ্যে চারটি প্রধান পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায় প্রায় জাগ্রত অবস্থার মতাে। দ্বিতীয় পর্যায়-ও প্রায় প্রথম পর্যায়েরই মতাে, তবে ঘুমের গভীরতা প্রথম অবস্থার চেয়ে দ্বিতীয় অবস্থায় বেশি। একে বলে ফেজ অব ইকোয়ালিটি। তৃতীয় পর্যায়-এর নাম ফেজ অব প্যারাডক্স। এই পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। শেষ এবং চতুর্থ পর্যায়-এর নাম ফেজ অব আলট্রা-প্যারাডক্স। এই পর্যায়ে আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকি।

 সম্মােহিত অবস্থায় ঘুমের তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ প্যারাডক্সিকাল ফেজ’ দেখা যায়। ঘুমের এই পর্বকে আর. ই. এম. বা র্যাপিড আই মুভমেণ্ট’ পর্ব বলে। এই প্যারাডক্সিকাল ফেজে সম্মােহিতের ওপর সম্মােহনকারীর নির্দেশ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং প্রতিক্রিয়া খুবই অভাবনীয়। মস্তিষ্কের শারীরবৃত্তিক ধর্ম এবং বিশিষ্টতাই সম্মােহনকারীর শক্তি বলে প্রচারিত হয়ে আসছে।