হিস্টিরিয়া রোগী সাধারণত অশিক্ষিতদের মধ্যে বেশি। অশিক্ষিত, কুসংস্কারে আচ্ছন্নদের মস্তিষ্কের কোষের নমনীয়তা (elasticity) কম এবং আবেগপ্রবণতা খুব বেশি। ফলে কোনও কিছুই তারা যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে গভীরভাবে তলিয়ে দেখতে পারে না। হিস্টিরিয়াগ্রস্ত মানুষের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর সংখ্যাও কমছে। তবে, নামসংকীর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাবাবেগ চেতনা হারিয়ে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হয়ে পড়তে এখনও কিছু কিছু নারী-পুরুষকে দেখা যায় বই কী।
প্রাচীনকালে গণ-হিস্টিরিয়া সৃষ্টির বিষয়ে প্রধান ভূমিকা ছিল ধর্মের। এখন ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা। ধর্মান্ধতা, আবেগপ্রবণ জাতীয়তাবোধ, তীব্র প্রাদেশিকতা, রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি অন্ধ আনুগত্য বহুজনের যুক্তি-বুদ্ধিকে গুলিয়ে দিয়ে তীব্র ভাবাবেগে চলতে বাধ্য করে। এই গণ-হিস্টিরিয়া বা গণ-সম্মোহনের ক্ষেত্রে সম্মোহন-ঘুম না পাড়িয়ে Suggestion দিয়ে তীব্র উত্তেজনা তৈরি করা হয়। প্রয়োজনীয় ফল লাভ করা যায়। সাধারণত মানুষ যখন কোনও কারণে ভীত, উত্তেজিত বা ভক্তিরসে আপ্লুত হয় তখন ধর্মগুরু, রাষ্ট্রনেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের Suggestion অনেক সময় অসম্ভব রকম কার্যকর হয়।
আত্ম-সম্মোহন ও স্ব-নির্দেশ (auto-suggestion) যেমন একজন ব্যক্তির নিজের ইচ্ছের হতে পারে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে তার অজ্ঞাতসারেই সে autosuggestion দ্বারা নিজেকে নিজে সম্মোহিত করতে পারে। এইসব ক্ষেত্রেও শারীরবৃত্তি তার স্বাভাবিক নিয়ম মেনে চলে না। অস্বাভাবিক আচরণ করে। এই ধরণের আচরণ অস্বাভাবিক হলেও শারীরবৃত্তিরই অংশ।
তারকেশ্বরে বাবা তারকনাথকে পুজো দেওয়ার জন্য ভক্তরা যখন প্রচণ্ড শীতের মধ্যে মন্দির সংলগ্ন পুকুরে স্নান করে ভিজে কাপড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন ভক্তি ও বিশ্বাস মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ঠাণ্ডা লাগার জন্য নির্দেশ পাঠায় না, ফলে ঠাণ্ডা লাগে না।