পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৮৫
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
১৮৫

পীঠস্থান ও স্থান মাহাত্ম রহস্য ১৮৫ সুলতান মামুদের নির্দেশে দেবমূর্তিকে আবার শুন্যে স্থাপন করা হল। তারপর, তার লােকজনদের মন্দিরের দেওয়ালে লাগানাে পাথরগুলাে আস্তে আস্তে খুলে ফেলতে বললেন। এক পাশের দেওয়ালের পাথর একটি একটি করে খুলে ফেলতেই খুলে এলাে চুম্বক পাথর বা ম্যাগনেটাইট’। দেবমূর্তি শূন্য থেকে পড়ে গেল মেঝেতে। অলৌকিক দেবমূর্তির রহস্য ভেদ হলাে। বােঝা গেল দেবতার বদলে এক টুকরাে লােহা রাখলেও ভাসত। মন্দিরের পুরােহিতরা এবং কোন ধাতুবিদ বাস্তুকার তাঁদের জ্ঞানের অপপ্রয়ােগ করে শুধু লােক ঠকিয়ে বিপুল অর্থ ও সমীহ আদায় করেছিল। | মামুদ তথাকথিত অলৌকিক কিছু দেখেই যুক্তিহীন হয়ে পড়েননি বলেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হয়েছিল। নতুবা আরও কত শত বছর ধরে সােমনাথ মন্দিরের লােক ঠকানাের রমরমা ব্যবসা চলত, তা কে জানে। হয়ত আমাদের দেশের নেতারা নির্বাচনের আগে সােমনাথের আশীর্বাদ নিতে দৌড়তেন। সাধারণ মানুষ অসাধারণদের অনুসরণ করে ভিড় বাড়াতেন। প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য Physics for entertainment; Ya. Perelman; Vol. 1. Mir Publishers, Moscow 1975-এ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থানের এক সুন্দর অপকৌশল বর্ণনা করা হয়েছে। প্রাচীন মিশরের এক বিখ্যাত ধর্মস্থান একটি বিশেষ অলৌকিকত্বের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। দেবালয়ের মূল কক্ষের দরজা ছিল দুটি। একটি ছিল প্রধান দরজা, যার বাইরে অগণিত ভক্ত অপেক্ষা করতেন দেব-মাহাত্ম দরজা খুলে যাওয়ার অপেক্ষায়। | দ্বিতীয় ছােট দরজাটি ছিল পুরােহিতদের যাতায়াতের জন্য। নির্ধারিত সময়ে পুরােহিত মূল কক্ষে প্রবেশ করে একটা যজ্ঞবেদিতে অগ্নিসংযােগ করতেন। মঞ্চের আগুনে ফেলতেন সুগন্ধী ধুপ, সঙ্গে চলত মন্ত্রপাঠ। কক্ষের বাইরে অপেক্ষমান ভক্তেরা শুনতেন সেই অলৌকিক মন্ত্রোচ্চারণ। কিছুক্ষণ চলার পর ভক্তেরা সবিস্ময়ে দেখতেন দরজা একটু একটু করে খুলে যাচ্ছে। অথচ না, দরজার দু'পাশে কেউ কোথাও নেই। দরজায় নেই কোন দড়ি বাঁধা, যে দড়ি টেনে থিয়েটারের স্ক্রিন টানার মতাে করে কেউ দরজা খুলবে। কক্ষে একমাত্র লােক পুরােহিত, তিনি গভীর মনযােগের সঙ্গে যজ্ঞের আগুনে ধূপ ফেলে মন্ত্র পড়ে চলেছেন। যজ্ঞবেদিতে আগুন জ্বলছে দাউদাউ করে। না, কোন কৌশল নেই। সবটাই অলৌকিক | প্রাচীন মিশরের এই অলৌকিকত্বময় ধর্মস্থানের আসল রহস্য জানতে পারি প্রাচীন গ্রীসের গণিতজ্ঞ ও যন্ত্রবিদ আলেকজান্দ্রিয়া হেলাের উল্লিখিত যান্ত্রিক কৌশল থেকে।