পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৯২
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
১৯২

অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) উঠেছে। খেজুর গাছটার বৈশিষ্ট্য, সাধারণ খেজুর গাছের তুলনায় অনেক বেশি লম্বা। উচ্চতায় ৪০-৪৫ ফুট হবে। আমাদের দেশের মানুষ অসাধারণ অনেক কিছুতেই দেবত্ব আরােপ করেন। যেমন জোড়া মানুষ, বাড়তি পা-ওয়ালা গরু ইত্যাদি। তেমন-ই ব্যাপারটা ঘটেছে খেজুরের এই গাছের বেলায়। তবে এমন লম্বা বা এর চেয়েও লম্বা খেজুর গাছ আমার যাযাবর জীবনে এর আগেও কয়েকবার দেখেছি। খেজুরতলার গায়ে-ই মানিক পিরের মাজার। এই মাজার-ই বলতে গেলে এখন বুড়িমার থানে রূপান্তরিত হয়েছে। | যখন পৌছলাম, তখন খেজুর গাছ পুজো হচ্ছে। গাছ ঘিরে নতুন টিনের বিশাল হল গড়ে উঠেছে। গাছের তলায় ঘট পাতা। ঘটের উপর প্রচুর শাড়ি। খেজুর গাছেও প্রচুর শাড়ি জড়ানাে। ঢাকের বাদ্যি, কাসর ঘন্টার আওয়াজ, ধুনাের ধোঁয়া ও গন্ধ হাজার ভক্তের ভিড়। পুরােহিত ব্রজেন ব্রহ্ম। তাকে ঘিরে একগাদা নারী-পুরুষ। এঁরা পুরােহিতের সাহায্যকারী। এঁরা হাতে হাতে মাটির তাল এনে দিচ্ছেন ব্রজেন ব্রহ্মের কাছে। ব্রজেন ব্রহ্ম মাটির তাল খেজুর গাছে দুইয়ে আবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তাল হাতে হাতে ফিরে এসে ছােট ছােট নাড়ু বা মােয়ার সাইজ হয়ে ভক্তদের হাতে যাচ্ছে। অনেকে ওখানেই পরম ভক্তির সঙ্গে কপ-কপ করে কামড়ে মাটি খেয়ে নিচ্ছেন। সে এক অ উন্মাদনা। মন্দির কমিটির এজেন্টরা গােটা দশেক মাইকে ঘােষণা করে চলেছেন, আপনারা যারা খেজুর তলার অলৌকিক মাটি সংগ্রহ করেছেন, তারা বেরিয়ে আসুন ও বাইরে অপেক্ষারত হাজার হাজার ভক্তদের ঢােকবার সুযােগ করে দিন। টিনের শেডের তলায় অন্তত ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী। তঁারা ভিতরের ভক্তদের বের করে দিয়ে বাইরের মানুষদের ঢুকতে সাহায্য করছেন। থেকে থেকে স্লোগান উঠছে ‘জয় খেজুরতলার জয়’, ‘জয় বুড়িমা’র জয়’। স্লোগান দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। সুর মেলাচ্ছেন ভেতর-বাইরের হাজার হাজার ভক্ত। গণহিস্টিরিয়া তৈরির সব প্রকরণ-ই তৈরি। মাইকে যিনি ঘােষণা করছিলেন তাঁকে অনুরােধ করলাম, সাক্ষাৎকার নেবাে ব্রজেন ব্রহ্মের, এইসময় ঢাক-কাঁসর আর জয়ধ্বনি যেন বন্ধ থাকে। মাইকে ঘােষণা করা হলাে-কলকাতা থেকে টিভি টিম এসেছে। তারা ব্রজেন ব্রহ্মের ইন্টারভিউ নেবেন। তাই ঢাক ও কাঁসর বাজানাে বন্ধ রাখতে অনুরােধ করছি। | ব্রজেন ব্রহ্ম ওরফে ব্রজেন ব্রহ্মচারী স্বাস্থ্যবান লম্বায় ৫ ফুট ১০ থেকে ১১ ইঞ্চির মধ্যে। গায়ের রঙ কালাে। পরনে লাল পাড় সাদা শাড়ি, খালি গা। সাক্ষাৎ দিলেন। শােনালেন বুড়ি মা’কে পাওয়ার কাহিনি। | শিক্ষার সুযােগ মেলেনি। পেশা-আশেপাশের গাঁ থেকে ডিম কিনে হাবড়া বাজারে বিক্রি করা। থাকেন মাঠপাড়ায়। ওপার বাংলার ছিন্নমূল উদ্বাস্তু। গুছিয়ে কথা বলতে অভ্যস্ত।