পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
নতুন কিছু কথা
২৩

তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। হতে হবে তাদের ভরসাস্থল। তবে না মানুষগুলো নেতার কথায় জীবন দিতে পারবে অবহেলে। এই নেতারা তো শূন্য থেকে হঠাৎ করে জন্মায় না। এরা একটু একটু করে হয়ে ওঠে। বরং বলা ভালো—একজন ভালো খেলোয়াড়কে গড়ে তোলার মতোই নেতা গড়ে তুলতে হয়। তারপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত-লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নেতা পরিশীলিত ও মার্জিত হয়।

 যুক্তিবাদী সমিতির অনেক রকম কুসংস্কার বিরোধী কাজের পাশাপাশি সাম্যের সমাজ গড়ার চিন্তাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার বিষয়ে সমস্ত রকমের সহযোগিতা করাও কাজ।

 এই আলোচনার মধ্য দিয়ে এটাই উঠে এল যে, যুক্তিবাদী সমিতি শুরুতে দুটি লক্ষ স্থির করেছিল। (এক), জনগণের একটা অংশকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করা। এবং সেইসঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান করা, সেই অনুষ্ঠানে তথাকথিত নানা অলৌকিক ঘটনার পিছনের লৌকিক কৌশলকে বেআব্রু করা, কুসংস্কার বিরোধী ‘ওয়ার্কশপ’ (যারা কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান করতে ইচ্ছুক, তাদের তৈরি করা), তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের এবং জ্যোতিষীদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাদের ভণ্ডামি ফাঁস করা, কুসংস্কার-বিরোধী নাটক, পথসভা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জাগিয়ে তোলা—ঐশ্বরিক শক্তি, ঈশ্বর, কর্মফল, ভাগ্য ইত্যাদির কোনও বাস্তব অস্তিত্ব নেই।

 (দুই), শোষিত মানুষদের মধ্য থেকে এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো মানুষ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হওয়া। সেই মানুষ যুক্তিবাদী সমিতির সভ্য হতে পারেন, আবার না-ও হতে পারেন। কিন্তু তাঁকে হতেই হবে সৎ, নির্লোভ, সাহসী, সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কিছু মানুষই শোষিত মানুষদের অধিকার বিষয়ে সচেতন করে বঞ্চনার ক্ষোভ জাগিয়ে তুলতে ও তাদের সমাবেশিত করতে পারেন। সেইসঙ্গে একথাও মনে রাখতে হবে সব্বাইকে সব কিছু বুঝিয়ে তারপর বিপ্লবের কাজে হাত দিতে গেলে আর বিপ্লব হবে না। কারণ সকলে কোনও দিন-ই একমত হবে না।

 (তিন), সাম্যের সমাজ গড়তে গেলে এতদিনকার চিন্তা-ভাবনা-মূল্যবোধের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ দেখা দেবে। সেই সংঘর্ষে লাঠি-বন্দুক না থাকলেও থাকবে পুরোনো চিন্তার সঙ্গে নতুনের ঠোকাঠুকি। আপনার উন্নততর ধ্যান-ধারণা নিয়ে যখনই প্রচারে নামবেন, দলিতদের অধিকার সচেতন করতে নামবেন, তখনই হুজুরের দল ও তাদের সহযোগীরা আপনার বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নামবে। তার মধ্যে থাকবে রাজনৈতিক দল, তাদের ‘বাহুবলী’রা, পুলিশ-প্রশাসন, প্রচার মাধ্যম ইত্যাদিদের কেউ কেউ। অথবা সবাই একজোট হয়ে আপনার ও আপনার দলের