পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পীঠস্থান ও স্থান মাহাত্ম রহস্য
২০৩

হাত থেকে বাঁচাতে রাস্তা নির্মাণ কর্তৃপক্ষ পুলিশের সাহায্য নিল। পুলিশী সাহায্যের প্রয়ােজন ছিল, দেখা গেল বেশ কিছু লােক লাঠিসােটা নিয়ে গাছ কাটা প্রতিরােধ করতে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গাছের অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী লােকদের গাছের অলৌকিক শক্তিকে অবিশ্বাস করে লৌকিক সাহায্যের হাত বাড়ানাের কোনও প্রয়ােজন ছিল কী? এ তাে তাদের জানা থাকাই উচিত যে, এই লােকটিও গাছ কাটতে ব্যর্থ হবে। লােকটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়নি, গাছটি কাটাতে সমর্থ হয়েছিল। বুঝতে অসুবিধে হয় না অলৌকিকত্ব আরােপ করে মন্দির গড়তে পারলে বিনা শ্রমে লােক ঠকিয়ে টাকা রােজগার করা যাবে ভেবেই সমস্ত ব্যাপারটা সাজানাে হয়েছিল। গাছ কাটতে এসে যার কুড়ুল থেমে গিয়েছিল, গাছের ওপর দিয়ে বুলডােজার চালাতে গিয়ে যে ব্যর্থ হয়েছে, তারা ছিল সাজানাে লােক, স্রেফ অভিনয় করেছে।

গাইঘাটার অলৌকিক কালী

 ১৯৮৩ সাল। গাইঘাটার অলৌকিক কালী রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কলাসীম বাজারের কাছেই এই কালীমন্দির। পত্রপত্রিকার প্রচারে ভিড়ে ভিড়ে ছয়লাপ। ১৯৮৩-র ১২ এপ্রিল সন্ধে নাগাদ চব্বিশ পরগনার গাইঘাটার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল এক ক্ষণস্থায়ী তীব্র ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ে ২০টি গ্রাম প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৩ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা ছিল ২০০ মতাে। ঝড়ে পঞ্চায়েত অফিসের ছাদ উড়ে গিয়ে পড়ে প্রায় ১০০ ফুট দূরে। বিদ্যুৎ দপ্তরের পাকা বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চারটি রিভার লিফট পাম্প উপড়ে ফেলে। সুপুরি ও খেজুরগাছ মাথা কাটা কণিষ্ক হয়ে যায়। কলাসীম স্কুলবাড়ির একতলা পাকা ঢালাই ছাদ পুরােটাই উড়িয়ে নিয়ে যায় প্রলয়ঙ্কর ঝড়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথামতাে ঝড়ের সময় মনে হলাে একটা আগুনের গােলা তীব্র বেগে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাচ্ছে। আগুনের গােলা ও ঝড় দুটো একই সময় একই সঙ্গে বিদায় নেয়। ঝড়ের প্রচণ্ডতায় এত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও আশ্চর্যভাবে রক্ষা পেয়েছে কলাসীম বাজারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দির। সন্ধ্যায় মন্দিরের পুরােহিত মানিক গাঙ্গুলি মায়ের পুজো করছিলেন। ঝড় সবকিছু তছনছ করে চলে গেল, শুধু স্পর্শ করল না মায়ের মন্দির। সাধারণের মনে প্রশ্ন এলাে, এটা কী দেবীমাহাত্ম্য নয়? একে মায়ের লীলা ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়? সাধারণের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে আর একটু ইন্ধন যােগাল পত্রপত্রিকাগুলাে। মন্দির অক্ষত রাখার কারণ অনুসন্ধানে কোন আবহাওয়া বিজ্ঞানীর সাহায্য না নিয়ে, যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যার জন্য কোনও কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা না করে, বেশির ভাগ পত্রপত্রিকাগুলােই মন্দিরে আবিষ্কার করল ‘মায়ের লীলা’। অগ্নিগােলকেও আবিষ্কার করল ‘মায়ের লীলা’।

 যে ঝড়টি সেদিন সন্ধেতে গাইঘাটার বুকে প্রলয় তুলেছিল, আবহাওয়াবিদদের