কিছু মানুষ এলেন। উদ্দেশ্য যুক্তিবাদী একটা সংগঠন গড়ার কাজকে রূপ দেওয়া। অসিত চক্রবর্তী, ডাঃ জ্ঞানব্রত শীল, ডাঃ সুখময় ভট্টাচার্য, তরুণ মান্না, গৌতম, অমরেন্দ্র আদিত্য, জ্যোতি মুখার্জি এবং আরও কয়েকজন।
সেদিনই গড়ে উঠলাে সংগঠন। নাম দেওয়া হলাে ‘ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতি।’ আমাদের সমিতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ লিখে ফেলা হলাে। তাতে লেখা হলাে; “আমরা সমাজ-সচেতনতার মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি ভারতের শােষিত জনগণের মুক্তির জন্য এতাবৎকাল যে সকল সংগ্রাম হয়েছে তার ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ—সংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তােলার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রতি গুরুত্ব আরােপ না করা। এ দেশের রাষ্ট্রশক্তি অর্থাৎ শােষক ও তাদের সহায়ক শ্রেণিরা শােষিত মানুষকে সংগঠিত হবার সুযােগ দিতে নারাজ। তাই পরিকল্পিতভাবে ধর্ম, জাত-পাত, প্রাদেশিকতাকে ভেদাভেদের ভিত্তি হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। বঞ্চিত মানুষদের মাথায় ঢােকাতে চাইছে—তাদের প্রতিটি বঞ্চনার কারণ অদৃষ্ট, পূর্বজন্মের কর্মফল, ঈশ্বরের কৃপা না পাওয়া।”
...“আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি, আমাদের দেশে বাস্তবিকই আজ পর্যন্ত জনজীবনে কোনও ব্যাপকতর গুণগত সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটেনি। ফলে একইভাবে শােষিতদের চিন্তার ভ্রান্তির জালে আবদ্ধ রেখে শােষকরা শােষণ চালিয়েই যাচ্ছে। এতাবৎকাল আমাদের দেশে কুসংস্কার মুক্তির আন্দোলনের নামে অথবা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নামে যা যা ঘটেছে তার কোনওটাই বাস্তবিক অর্থে আদৌ সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল না। ভারতে সংগঠিত তথাকথিত রেনেসাঁস যুগের আন্দোলন ছিল সমাজের উপরতলার কিছু ইংরেজি শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ কিছু সংস্কার প্রয়াস মাত্র। তৎপরবর্তী তথাকথিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলি ছিল শুধুমাত্র কলাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ।”
“আমাদের যুদ্ধ শােষণের শক্তিশালীতম হাতিয়ার প্রতিটি কুসংস্কার ও ভ্রান্ত-বিশ্বাসগুলাের বিরুদ্ধে।”
“ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতির একটা লােগাে বা প্রতীক তৈরির ভার পড়লাে আমার উপর। ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’আজও সেই প্রতীক-ই ব্যবহার করছে।
১৯৮৬-র জানুয়ারিতে কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হলাে ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’। প্রথম প্রকাশক: এ মুখার্জি অ্যাণ্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেড। কলকাতা-৭০০ ০৭৩। এতাে বিপুল সাড়া পাব, কল্পনাতেও ছিল না। বইমেলাতে বই যােগাতে হিমশিম খেয়েছে প্রকাশক সংস্থা। আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগলাে। অনেক মানুষের অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক কৌতুহল। ‘যুক্তিবাদী