পুরুষ ও নারীর ভিড়ে সাদা ফুলে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কফিনটা। কার কফিন? কফিনের ভেতরটাও দেখতে পেলেন লিংকন। কফিনের ভেতরে শায়িত রয়েছে তাঁরই মৃতদেহ।
যেদিন লিংকন স্বপ্নটা দেখেন, তার পরদিনই আততায়ীর গুলিতে প্রাণ দিলেন লিংকন।
লিংকনের এই স্বপ্নের বিবরণ পাওয়া যায় তাঁরই ডায়েরি থেকে। এইটুকু শোনার পর অনেকেরই মনে হতে পারে লিংকন অন্তত একবারের জন্য ভবিষ্যৎদ্রষ্টার ক্ষমতা পেয়েছিলেন। অন্তত পরামনোবিজ্ঞানীরা তো তাই বলেন।
ব্যাপারটার মধ্যে আদৌ সামান্যতম অলৌকিকত্ব বা অতীন্দ্রিয় কিছুই নেই। স্বপ্ন নিয়ে সামান্য দু-একটা কথা বললে বিষয়টা বুঝতে আশা করি অসুবিধে হবে না।
মানুষের স্বপ্নে অনেক সময়েই তার চিন্তা-ভাবনা প্রতিফলিত হয়। আর চিন্তা-ভাবনা সবসময় যে সচেতনভাবে এসে হাজির হয় তাও নয়। অনেক সময় পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার ছাপও এসে পড়ে মানুষের অবচেতন মনে। এই চেতন বা অবচেতন মনের ভাবই বহুক্ষেত্রে স্বপ্নে অগভীর ঘুমের মধ্যে হানা দেয়। গভীর ঘুমে মানুষের স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা খুবই কম, প্রায় নেই বললেই চলে। গভীর ঘুমে যদিও বা স্বপ্ন দেখা দেয় তবু, সে-স্বপ্ন সাধারণত আমাদের মনে থাকে না।
শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ তাঁর কোনও কোনও গল্পের প্লট পেয়েছিলেন স্বপ্নে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী কেকুলে কার্বনের গঠন-কাঠামোর রূপটি স্বপ্নেই প্রথম দেখেছিলেন। অনেক কবি স্বপ্নে কবিতা পান। কোলরিজ তো একটা পুরো কবিতাই স্বপ্নে দেখে লিখে ফেলেন। কেউ স্বপ্নে একটা জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান খুঁজে পান। আর কেউ-বা স্বপ্নে পান ঈশ্বরের দর্শন, ঈশ্বরের মন্ত্র বা ঈশ্বরের আদেশ।
লক্ষ্য করলেই দেখবেন,
একজন কবি কিন্তু কোনদিনই তাঁর অজানা এক জটিল গাণিতিক
সমস্যার সমাধান নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন না। একজন কাব্যরসে
বঞ্চিত লোক স্বপ্নে কোনদিনই কাব্যগুণ সম্পন্ন কোন
কিছু সৃষ্টি করতে পারবেন না।
নিরীশ্বরবাদী কখন-ই ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ পান না। আব্রাহাম লিংকন যে কঠিন ও অগ্নিময় পরিস্থিতির মধ্যে দেশ শাসন করছিলেন, তাতে তাঁর খুন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সব সময়ই। আর সেটা লিংকনেরও মোটেই অজানা ছিল না। এই অবস্থায় লিংকনের নিজের মৃত্যু নিয়ে স্বপ্ন দেখা এবং সেটা বাস্তবে ঘটে যাওয়ার মধ্যে অতীন্দ্রিয়তা আসছে কোথা থেকে? এই প্রসঙ্গে এ-টুকুও জানিয়ে রাখি, নিজের মৃত্যু নিয়ে লিংকন এর আগেও বেশ কয়েকবার স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু মরেছেন ওই একবারই।