ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টার রায় সত্যজিৎ রায়ের বেলায় মেলেনি
১৯৮৫-র ২৩ জুলাই, ‘আনন্দমেলা’র দপ্তরে গল্প করছিলাম আমি, শ্যামলকান্তি দাশ ও রতনতনু ঘাটী। শ্যামল বললেন—আজ ভোর রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছেন। অদ্ভুত জীবন্ত স্বপ্ন, সত্যজিৎ রায় মারা গেলেন। কলকাতার প্রতিটি পত্রিকায় বিশাল বিশাল হরফে হেড-লাইন দিয়ে অনেক ছবির সঙ্গে গোটা পত্রিকাটাই প্রায় সত্যজিৎবাবুর খবরে ঠাসা। ২০ হাজার শোকার্ত লোকের বিশাল শব-মিছিল বেরুল ‘বিশপ লেফ্রয়’ রোডের বাড়ি থেকে। কেওড়াতলায় পোড়ানো হলো মরদেহ।
শ্যামল আরও জানালেন, ওঁর দেখা স্বপ্নগুলো আশ্চর্যজনকভাবে সত্যি হয়। অনেকবার অনেকের মৃত্যু নিয়ে স্বপ্ন দেখার পর লক্ষ্য করেছেন, দু’একদিনের মধ্যেই তাদের মৃত্যু ঘটে। আমার লেখক বন্ধুটিকে বললাম, “দেখাই যাক, তোমার এবারের স্বপ্ন সত্যি হয় কিনা!” কিন্তু, সত্যি হলেও কী এটাকে তোমার ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়ার শক্তি বলে মেনে নেওয়া যাবে? সত্যজিৎবাবুর অসুস্থতার খবর কারোরই অজানা নয়। তাঁর যথেষ্ট বয়েসও হয়েছে। এই ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে এই ধরনের স্বপ্ন দেখা তোমরা মতো একজন শিল্প-সাহিত্যের প্রেমিকের পক্ষে কোনই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তুমি আগের কিছু স্বপ্নের ক্ষেত্রেও সে-গুলিকে সত্যি হতে দেখেছ, কিন্তু যতগুলো স্বপ্ন আজ পর্যন্ত দেখেছ, তার মধ্যে কতগুলো সত্যি হয়েছে। লিখে রেখে হিসেব করে দেখেছ কী?
শ্যামলের সঙ্গে আলোচনা হলেও শ্যামল আমার যুক্তিগুলোকে সম্ভবত মেনে নিতে পারেননি। ওঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবারের স্বপ্নটাও সত্যি হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়নি। তারপরও বছর দশেক বেঁচে ছিলেন।
নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই একটা ভবিষ্যদ্বাণী যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছিল। ব্রিজওয়াটার-এর প্যাট সেণ্ট জন ভবিষ্যদ্বাণী করেন ১৯৭৯-এর ২২ জুলাই স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙে পড়বে। সংবাদটিকে গুরুত্ব দিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার তরফ থেকে সাংবাদিক ও ফোটোগ্রাফাররা এসে হাজির হয়েছিলেন। ঘটনাকে সেলুলয়েডে বন্দি করতে হাজির ছিল বিভিন্ন টিভি কোম্পানি। ভবিষ্যদ্বাণীর খবরটি টেলিভিশন মারফত প্রচারিত হওয়ায় শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিভিন্ন শ্রেণির লোকের মধ্যেই যথেষ্ট ঔৎসুক্য ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।
ঘটনার দিন বিকেলের আগেই নায়াগ্রা নদীর জেটিতে এসে হাজির হলেন ‘দি হিউম্যানিস্ট’ পত্রিকার সম্পাদক পল কুরৎজ। তারপর এঁরা যা করলেন তা দেখে উপস্থিত হাজার-হাজার দর্শক, সাংবাদিক ও টিভি-র লোকেরা হতভম্ব। পল কুরৎজ