অধ্যায়: ষোলো
ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
দর্শনের ইতিহাসে মূল দ্বন্দ্ব ভাববাদ বা বিশ্বাসবাদ
বনাম বস্তুবাদ বা যুক্তিবাদ। ভাববাদের সঙ্গে
যুক্তিবাদের দ্বন্দ্বই অন্ধবিশ্বাসের
সঙ্গে যুক্তির লড়াই।
ভাববাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত বিশ্বাসবাদ, শাস্ত্র-বিশ্বাস, ধর্ম-বিশ্বাস, গুরু-বিশ্বাস, আধ্যাত্মবাদ। ‘শাস্ত্র’ বলতে শুধু বেদ-উপনিষদ নামে ‘শ্রুতি’ নয়, ‘ধর্মশাস্ত্র’ (প্রাচীন আইন গ্রন্থ) নামে ‘স্মৃতি’ও। ভাববাদীদের কাছে শাস্ত্রবাক্যই প্রমাণ।
বস্তুবাদ বা যুক্তিবাদে এমন অন্ধ বিশ্বাসের কোনও স্থান নেই। যুক্তিবাদ সিদ্ধান্তে পৌঁছোয় যুক্তির পথ ধরে, পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পথ ধরে।
ভাববাদী মনুর বিধান হলো, বেদকে ‘শ্রুতি’ এবং ‘ধর্মশাস্ত্রকে’ স্মৃতি বলে মানবে। বেদ ও ধর্মশাস্ত্রই হলো হিন্দু ধর্মের মূল। এ-নিয়ে কোনও বিতর্ক করা চলবে না। কোনও তার্কিক দ্বিজ যদি তর্কবিদ্যার সাহায্য নিয়ে ‘শ্রুতি ও স্মৃতি’র অবমাননা করে তাহলে সাধু ব্যক্তিরা তাকে সমাজ থেকে বের করে দেবে! বেদ-নিন্দুকেরা নাস্তিক। (২/১০-১৬)
‘মনুর বিধান’ যে বলা হলো, সেই মনু কে? হিন্দু ভাববাদীদের বিশ্বাস মনু কোনও রমণীর গর্ভজাত নন, ব্রহ্ম তাঁর দেহ থেকে তৈরি করলেন একটি নারী—নাম শতরূপা ও মনুকে শতরূপার সঙ্গে ব্যভিচারের ফলে মনুর জন্ম। পরে মনু তাঁর মাতা শতরূপাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। মনু ব্রহ্মার দেহ থেকে উদ্ভুত, এই হেতু তাঁর আর এক নাম ‘স্বয়ম্ভূ’ মনু। মনু’র স্ত্রী শতরূপা থেকে ছেলে প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ, কন্যা আকুতি, দেবহুতি ও প্রসূতির জন্ম। এঁদের ছেলে-মেয়েদের থেকেই না কি মানুষ বা মানবজাতির এই আদি মনু স্বয়ম্ভর মনুর পর আরও ১৩ জন মনু সৃষ্টি করেন ব্রহ্মা। তাঁরা হলেন (১) স্বরোচিষ (২) উত্তম, (৩) তামস, (৪) রৈবতঃ, (৫) চক্ষুস, (৬) বৈবস্বত, (৭) সাবর্ণি, (৮) রোচ্য, (৯) ভৌত্যঃ (১০) মেরুসবর্ণি, (১১) ঋভু, (১২) ঋতুধামা ও (১৩) বিষ্ককসেন।