পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪০
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

গাজিয়াবাদ থেকে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে পড়ে দিল্লি, চণ্ডীগড়, লুধিয়ানা, জয়পুর, এলাহাবাদ, কাশী, পাটনা, কলকাতা সহ আরও বিভিন্ন শহরে। হাজারে হাজারে মানুষ মন্দিরে হাজির হন দুধ-চামচে নিয়ে। এদের মধ্যে প্রথাগত ভাবে শিক্ষিতের সংখ্যা বিপুল।

 ২০ আগস্ট রাত ১০টা নাগাদ প্রথম ফোন করে আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চান ‘স্টার নিউজ’-এর প্রতিনিধি। ১০টা ১৫-তে আমাকে ফোনে ধরলেন ‘স্টার-আনন্দ’-এর প্রতিনিধি। তাঁর সঙ্গে আমার ফোনের কথোপকথন প্রচারিত হলো। বললাম, ১১ বছর আগের অভিজ্ঞতার কথা। জানালাম, গনেশ বা অন্য দেবমূর্তির দুধপানের মধ্যে অলৌকিক কিছু নেই। আপনাদের তোলা যে ছবি দেখাচ্ছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে সমস্ত দুধই শ্বেতপাথরের দেবমুর্তির গা বেয়ে নেমে যাচ্ছে। মুর্তির তলা বেয়ে সিঁড়ি পর্যন্ত ভেসে যাচ্ছে দুধে। ভক্তরা দুধভরা চামচ ধরছেন মূর্তির ভেজা শুঁড়ে বা ঠোঁটে। শুঁড়ের বা ঠোঁটের একটি জলবিন্দু চামচের দুধকে আকর্ষণ করছে। এটা তরল পদার্থের ধর্ম। তারপর মাধ্যাকর্ষণের পৃষ্ঠটানে আকর্ষিত হয়ে দুধের কিছুটা ভেঁজা শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছে তলায়। ওমনি ভক্তরা চামচকে বেশি করে হেলিয়ে ধরছেন। চামচের দুধ যতই কমতে থাকে, ততই চামচ আরও বেশি করে হেলিয়ে ধরেন ভক্তরা। ভক্তি থেকে অবচেতন মন চামচে হেলাতে শুরু করতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক মানসিক প্রতিক্রিয়া। আবার কেউ নিজেকে জাহির করতে ইচ্ছে করেও হেলাতে পারে।

 সেদিন রাতেই আনন্দবাজারের প্রতিনিধি এ বিষয়ে আমার সাক্ষাৎকার নিলেন। পরদিন ভোরে আমাকে ঘুম থেকে তুললেন ‘স্টার আনন্দ’। ফোনে সাক্ষাৎকার। বললাম, যে পদার্থ যত বেশি, তরল অর্থাৎ সান্দ্রতা বেশি, সে-পদার্থকে তত বেশি তাড়াতাড়ি আকর্ষণ করবে দেবমূর্তির শরীরে লেগে থাকা তরলবিন্দু। কেরসিন থেকে হুইস্কি, ফলিডল থেকে সাবানজল দেবতারা সব পান করবে। শুধু খেতে পারবে না লাড্ডু, পেঁড়া, আপেল এইসব না-তরল পদার্থ। |

 ২১ আগস্ট দুপুরে ‘স্টার আনন্দ’-এর ঋতব্রত এলেন। সঙ্গে ফটোগ্রাফার। ওদের কাজ শেষ করেই ‘তারা’-র ওবি ভ্যানের সঙ্গে মন্দির পরিক্রমা শুরু করলাম। ‘তারা’র প্রতিনিধি অয়নদেবের এক প্রশ্নের উত্তর জানালাম, যেসব পদার্থ বিজ্ঞানী বলেছেন, কাঁচ, চিনেমাটি, ধাতুর তৈরি মূর্তি দুধপান করবে না; তাঁরা যদি হাতে কলমে পরীক্ষা করতেন তো দেখতেন ওইসব ধাতুমূর্তিও দুধ খায়। ওঁদের বক্তব্য ছিল, যে-সব মূর্তির গায়ে খালি চোখে দেখা যায় না, এমন ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, তারাই শুধু ‘দুধপান’ করে। এটা দুধপানের অন্যতম শর্ত। ছিদ্রগুলোতে দুধ ঢুকে যায়, তাইতেই চামচের দুধ কমে। ছিদ্রগুলো দুধে ভর্তি হয়ে গেলে মূর্তি খাওয়া বন্ধ করে।