চক্রবর্তী এই সময় আর একটি দেহ ধারণ করে ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে তাঁর কাছে হাজির হয়ে দেখা দেন। পরে ট্যাক্সি যখন ভক্তের বাড়িতে পৌঁছয়, তখন সব শেষ। পরেশ চক্রবর্তীকে সেই মুহূর্তে আবার ঘরে ঢুকতে দেখে ভক্তের বাড়ির সকলেই অবাক হয়ে যান। আর বিস্মিত হন, যখন জানতে পারেন যে, যেই সময় তাঁরা রোগীর শিয়রে পরেশ চক্রবর্তীকে দেখেছেন সেই সময় বাস্তবিকপক্ষে তিনি ছিলেন ট্যাক্সিতে। জমাটি গল্প, সন্দেহ নেই!
আমার ভায়রা পুলিন রায়চৌধুরী ছিলেন পেশায় শিক্ষক। তাঁর বড়দা তান্ত্রিক বলে পরিচিত। তাঁর কাছে শুনেছি, তিনি একবার বিশেষ কাজে ট্রেনে যেতে যেতে মনে পড়ে আজ তাঁর বাড়িতে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাইরে থেকে আসবেন। তিনি বাস্তবে ট্রেনে ভ্রমণ করতে থাকেন এবং আরও একটি দেহ ধারণ করে বন্ধুকে সঙ্গ দেন।
আমি বলেছিলাম, “আপনি আমার সামনেই দু-জন হয়ে দেখান তো।” তান্ত্রিক বাবাজি তারপর থেকে আমাকে এড়িয়ে চলেন।
একই লোকের দু’জায়গায় হাজির হওয়া নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন জাদুকর আলেকজাণ্ডার হারম্যান-এর একটি সত্যি-গল্প শোনাই। হারম্যান দিন-গ্রেট ছিলেন খেয়ালি প্রকৃতির লোক। তিনি যখন যে শহরে জাদুর খেলা দেখিয়েছেন তখন সেই শহরের লোকেরা দেখেছেন তাঁর দুটো অস্তিত্ব। কখনও শহরের থিয়েটার হলে যে’সময় জাদুর খেলা দেখিয়ে কয়েকশো লোককে অবাক করে দিয়েছেন, সেই একই সময়ে শহরের বাজারে কয়েকশো লোক তাঁকে বাজার করতে দেখেছেন। আবার কখনও একই সঙ্গে তাঁকে দেখা যাচ্ছে হলে জাদুর খেলা দেখাতে এবং ঘোড়দৌড়ের মাঠে ঘোড়ার দৌড় দেখতো। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক শো বা কয়েক হাজার লোক। এসব ক্ষেত্রে শেখানো-পড়ানো মিছে কথা সুযোগ নেই। অতএব সে কালের বহু লোকই বিশ্বাস করতেন, হারম্যানের অলৌকিক ক্ষমতা আছে।
হারম্যানের কিন্তু অলৌকিক ক্ষমতা ছিল না। ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও উপযুক্ত সহকারী উইলিয়াম রবিনসন। পরবর্তীকালে এই রবিনসনই চ্যাং লিং সু ছদ্মনামে জাদুর জগতে এসে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাদুকর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
অসাধারণ প্রতিভাধর দুই হারম্যান ও রবিনসনের শরীরের কাঠামোর সাদৃশ্যের সুযোগ নিয়ে তাঁরা স্টেজের বাইরেও আর এক খেলায় মেতে ছিলেন। রবিনসন নিখুঁত ছদ্মবেশে হারম্যান সেজে যখন খেলা দেখাতেন তখন হারম্যান হাটে-মাঠে ঘুরে বেড়াতেন। ফলে, অলৌকিক জাদুকর হিসেবে প্রচার ও পয়সা লুটেছিলেন হারম্যান ও তাঁর দল।