পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অপত্যস্নেহের একশেষ।
১১৭

নিতান্ত নির্দয় প্রহার করিল। অনন্তর তিনি এই ব্যবস্থা করিলেন, উহার পুত্রেরা এখানে থাকুক, উহাকে অন্য এক আশ্রমে পাঠান যাউক। তদনুসারে সে একাকিনী আতাবাগো নদীর তীরবর্ত্তী আশ্রমান্তরে প্রেরিত হইল। মিশনরিভৃত্যেরা, হস্তবন্ধনপূর্ব্বক নৌকায় আরোহণ করাইয়া, তাহাকে ঐ আশ্রমে লইয়া চলিল। সে, আমায় কি অভিপ্রায়ে কোথায় লইয়া যাইতেছে, তাহার কোনও অবধারণ কবিতে পারিল না, ইহা বুঝিতে পারিল, অনেক দূরে লইয়া যাইতেছে। অত্যন্ত দূরবর্তী হইলে, আর আমি আবাসে আসিতে, এবং পতিদর্শন ও পুত্রমুখনিরীক্ষণ করিতে পাইব না, সেই জন্যই ইহারা আমায় এরূপে স্থানান্তরিত করিতেছে।

 এই সমস্ত ভাবিয়া নিতান্ত হতাশ হইয়া, ঐ স্ত্রীলোক অকস্মাৎ আবির্ভূত প্রভূতবলসহকারে, হস্তের বন্ধনচ্ছেদন পূর্ব্বক ঝম্পপ্রদান করিল, এবং সন্তরণ করিয়া নদীর অপর পারে চলিল। স্রোতের প্রবণতা বশতঃ অনেক দূর ভাসিয়া গিয়া, সে তীরবর্ত্তী গণ্ডশৈলের পাদদেশে সংলগ্ন হইল। ঐ গণ্ডশৈল, এই ঘটনা প্রযুক্ত অদ্যাপি মাতৃশৈল নামে প্রসিদ্ধ আছে। সে, তীরে উত্তীর্ণ হইয়া, অরণ্যে প্রবেশপূর্ব্বক লুকাইয়া রহিল। তদ্দর্শনে নৌকাস্থিত মিশনরি, সাতিশয় কুপিত হইয়া ঐ পর্ব্বতের নিকট নৌকা লাগাইতে আদেশপ্রদান করিলেন। নৌকা সেই স্থানে লগ্ন হইলে, তদীয় আদেশক্রমে ভৃত্যেরা অরণ্যে প্রবেশ করিয়া, সেই স্ত্রীলোকের অন্বেষণ করিতে লাগিল;