পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
আখ্যানমঞ্জরী।

করিয়া রাখিয়াছিল, উহার চতুর্দিকে উন্মত্তার ন্যায় পরিভ্রমণ করিতে লাগিল।

 এই হতভাগা নারী যেরূপ দুঃসাধ্য ব্যাপারের সমাধান করিয়াছিল, অসাধারণ বলবান ও অত্যন্ত সাহসী পুরুষেরাও তাহাতে প্রবৃত্ত হইতে পারে না। বর্ষাকালে তাদৃশ দুষ্প্রবেশ, দুরতিক্রম, হিংস্ৰজন্তুপরিবৃত অরণ্যের অতিক্রম করা, কোনও ক্রমে সহজ ব্যাপার নহে। প্রহারে ও অনাহারে সে নিতান্ত নির্বীর্য্য হইয়াছিল, বর্ষার প্রাবল্যনিবন্ধন জলপ্লাবন হওয়াতে, সেই অরণ্যের অধিকাংশ জলমগ্ন হইয়াছিল, মধ্যে মধ্যে সন্তরণ দ্বারা বহুসংখ্যক নদীরও অতিক্রম করিতে হইয়াছিল। এই চারি দিন, কি আহার করিয়া প্রাণধারণ করিলি, এই জিজ্ঞাসা করাতে সে বলিয়াছিল, অত্যন্ত ক্ষুধা ও ক্লান্তিবোধ হইলে, অন্য কোনও আহার না পাইয়া, যে সকল বৃহৎ কাল পিপীলিকা শ্রেণীবদ্ধ হইয়া বৃক্ষে উঠে, তাহাই ভক্ষণ করিতাম।

 অপত্যস্নেহের অনির্বচনীয় প্রভাব॥।

 কিয়ৎ ক্ষণ পরে আশ্রমবাসীরা সেই স্ত্রীলোককে প্রত্যাগত দেখিয়া বিস্ময়াপন্ন হইল, এবং ক্ষণবিলম্ব ব্যতিরেকে, তাহাকে আশ্রমের অধ্যক্ষ মিশনরি মহোদয়ের নিকটে লইয়া গেল। তিনি দেখিয়া, অত্যন্ত কোপাবিষ্ট হইয়া কি জন্য ও কি রূপে সে তথায় উপস্থিত হইল, জিজ্ঞাসা করিলেন। সে অশ্রুপূর্ণ লোচনে, আকুলবচনে সবিশেষ সমস্ত নিবেদন করিল। শুনিয়া, মিশনরি মহাপুরুষের অন্তঃকরণে কিছুমাত্র দয়ার সঞ্চার