পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
আখ্যানমঞ্জরী

বিবর্ণ হইয়া গিয়াছে, বক্ষঃস্থলে একটি অতি অল্পবয়স্কা বালিকা শয়ন করিয়া আছে, তাহার আকার জননীর অপেক্ষাও শীর্ণ ও বিবর্ণ, নয়ন দুটি মুদ্রিত, দেখিয়া বোধ হইল, তাহার মৃত্যু হইয়াছে, গৃহের একপার্শ্বে একটি হীনবেশ ম্লানমুখ পুরুষ, শীর্ণকায় শিশু-সন্তান ক্রোড়ে লইয়া, স্নেহপূর্ণ ও শোকাকুললোচনে তাহার মুখনিবীক্ষণ করিতেছে।

 গৃহপ্রবেশপূর্ব্বক সেই নিতান্ত নিৰুপায় পরিবারের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করিবামাত্র রাজজননী এত দুঃখিত ও ব্যথিত হইলেন যে, আর অগ্রসর হইতে পারিলেন না, স্বীয় সহচরীর হস্তধারণ, করিয়া সেই স্থানেই দণ্ডায়মান রহিলেন। ইতঃপূর্ব্বে ঈদৃশ হৃদয়বিদারণ ব্যাপার কখনও তাঁহার নয়নগোচর হয় নাই। গৃহস্বামী তাঁহাদিগকে দেখিবামাত্র, চকিত হইয়া দণ্ডায়মান হইলেন, শিশুসন্তানটাকে তাহার মৃতকল্পা জননীর পার্শ্বদেশে রাখিয়া দিলেন এবং তাঁহাদের সম্মুখবর্ত্তী হইয়া সাদরবচনে বসিবার অভ্যর্থনা করিলেন। রাজজননী, আমরা বসিতেছি, তুমি ব্যস্ত হইও না, এই বলিয়া আসনপবিগ্রহ করিলেন।

 কিয়ৎক্ষণ পরে, তাহার সহচরী আগমন-প্রয়োজন ব্যক্ত করিলেন। তিনি গৃহস্বামীকে বলিলেন, আমরা সংবাদপত্রে আপনকার বিজ্ঞাপন দেখিয়াছি, এবং বিজ্ঞাপনপত্রে যেরূপ লিখিত ছিল, তদনুসারে আপনকার অবস্থার সবিশেষ বিবরণ জানিবার নিমিত্ত আসিয়াছি। তিনি শুনিয়া বিনীতভাবে বলিলেন, আপনারা যে এই দীনের প্রতি দয়া করিয়া এ পর্যন্ত