পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
আখ্যানমঞ্জরী।

আহার প্রস্তুত করিয়া রাখি নাই। তখন সে কহিল, মহাশয়। তৃষ্ণায় আমার প্রাণ বিয়োগ হইতেছে, আহার করিতে কিছু না দেন, অন্ততঃ, জল দিয়া আমার প্রাণ দান করুন। এই প্রার্থনা শুনিয়া, ইয়ুরোপীয় কহিলেন, অরে পাপিষ্ঠ। তুই আমার আলয় হইতে দূর হ, আমি তোরে কিছুই দিব না। তখন সে, নিতান্ত হতাশ হইয়া, তথা হইতে প্রস্থান করিল।

 এই ঘটনার প্রায় ছয় মাস পরে, ঐ য়ুরোপীয় ব্যক্তি, বয়স্যগণ সমভিব্যাহারে, মৃগয়ায় গমন করিয়াছিলেন। মৃগ অন্বেষণে ইতস্ততঃ বিস্তর ভ্রমণ পূর্ব্বক, পরিশেষে, গভীর অরণ্যে প্রবেশ করিয়া, তিনি বয়স্যগণের সঙ্গভ্রষ্ট হইলেন। সায়ংকাল উপস্থিত হইল। তখন সে ব্যক্তি, কোন্‌ পথে গেলে, অরণ্য হইতে বহির্গত হইয়া, লোকালয়ে উপস্থিত হইতে পারিবেন, তাহার কিছুই নির্ণয় করিতে পারিলেন না, বয়স্যগণের নাম নির্দেশে করিয়া, উচ্চৈঃস্বরে বারংবার আহ্বান করিতে লাগিলেন, কিন্তু কাহারও উত্তর পাইলেন না। অতঃপর, তাঁহার অন্তঃকরণে বিলক্ষণ ভয়ের উদয় হইতে লাগিল। অধিকন্তু, সমস্ত দিনের পরিশ্রমে, তিনি নিতান্ত ক্লান্ত, এবং ক্ষুধায় ও পিপাসায় একান্ত অভিভূত, হইয়াছিলেন। এই সময়ে, এই অবস্থায়, তিনি, প্রাণ রক্ষা বিষয়ে, একপ্রকার হতাশ হইয়া, লোকালয়ের উদ্দেশ্যে, ইতস্ততঃ ধাবমান হইলেন।

 কিয়ৎক্ষণ পরে, আমেরিকার আদিম নিবাসী এক ব্যক্তির পর্ণশালা তাঁহার নয়নগোচর হইল। তখন, কিঞ্চিৎ আশ্বাসিত হইয়া, তিনি সত্বর গমনে কুটীরের দ্বারে উপস্থিত হইলেন, এবং