২২
পল্লীর ব্যথা[১]
কলিকাতার রম্য হর্ম্ম্যবাসী সুখসেবী জমীদার ও ব্যারিষ্টারবর্গ পল্লীগ্রামের দুর্দ্দশা কল্পনার নেত্রে দেখেন বটে, কিন্তু তাহার প্রকৃত অবস্থা অতি অল্প লোকই বুঝিতে পারেন। খুলনা জিলার এমনই দুর্দ্দশা যে, ২/১ ঘর জমীদার ব্যতীত—যেমন সাতক্ষীরা ও নকীপুর—সকলেই প্রায় বারো মাস সহরতলীতে বাস করেন। গণনা করিয়া দেখা গিয়াছে, খুলনা জিলার এই প্রকার অন্যূন এক শত জমীদার, তালুকদার, গাঁতিদার প্রভৃতি বিদেশে অবস্থান করেন। সুতরাং তাঁহাদের সঙ্গে প্রজাবর্গের সম্বন্ধ শুধু নায়েব, গোমস্ত প্রভৃতি কর্ম্মচারীর ব-কলম। মাত্র তিন সপ্তাহ হইল সাতক্ষীরা মহকুমার অন্তর্ভূক্ত কতকগুলি স্থানে ঘুরিয়া, ফিরিয়া বেড়াইয়াছি। সেগুলি আবার লবণাক্ত প্রদেশ; দেখিলাম, নৌকাযোগে জালা পূর্ণ করিয়া প্রায় এক ‘গণের’ পথ হইতে একটু মিষ্ট পানীয় জল আনিয়া লোক প্রাণধারণ করিতেছে। কোথাও বা দেখি যে, কাহারও জমীদারীর অন্তর্ভূত একটি উচ্চ প্রাইমারী স্কুল কোন রকমে অস্তিত্ব রক্ষা করিয়া আসিতেছে। এক জন জমীদার মাসে এক টাকা চাঁদা দিবেন বলিয়া প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন, কিন্তু তাহাও কয়েক বৎসর দিতে ভুলিয়া গিয়াছেন। এই শ্রেণীর জমীদার যখন ফসলের সময় মফঃস্বলে পদার্পণ করেন, তখন প্রজাগণের থর-হরি কম্প- ‘বর্গী এল দেশে’ এইরূপ আতঙ্ক উপস্থিত হয়। আবার বিশ্বস্তসূত্রে অবগত হইলাম, এই শ্রেণীর এক জমীদারের বিরুদ্ধে
- ↑ খুলনা জিলা সম্মিলনের সভাপতির অভিভাষণ, ২০শে জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৪ ।