পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী
১৪৩

সূত্র ছিল না। জ্ঞান সিং বুঝিলেন যে তাঁহাদের রাইফেলের গুলি শত্রুর মোটারবাহিত মেসিন গান্, হাল্কা স্বতঃচালিত (অটোমেটিক্) এবং হাত গ্রেনেডের মোটেই সমকক্ষ নয় এবং পরিখায় থাকা মানে নিশ্চিত মৃত্যু বা বন্দী দশা; অথচ শত্রুর কোন ক্ষতির সম্ভাবনাই নাই। তখন তিনি আদেশ দিলেন—‘আক্রমণ কর’ (‘চার্জ্’)।

 এই আক্রমণে নেতৃত্ব করিলেন তিনি নিজে। তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন—‘নেতাজীকি জয়’, ‘ইন্‌কিলাব্ জিন্দাবাদ’, ‘আজাদ হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ’, ‘চলো দিল্লী’। সমস্ত সৈনিক একযোগে তাহার পুনরাবৃত্তি করিল এবং শত্রুর কামানের শব্দ ছাপাইয়া সেই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হইল। শত্রুর উৎকৃষ্ট যান্ত্রিক অস্ত্রসজ্জার বিরুদ্ধে আমাদের বীর সৈনিকদের ইহাই ছিল একমাত্র সম্বল। ভারতের নামে—ভারতের স্বাধীনতার জন্য তাহার শত্রুর মোটার বাহিনীর উপর ঝাঁপাইয়া পড়িল।

 শত্রু তখনি থামিয়া গেল। ইহার পর আরম্ভ হইল হাতাহাতি যুদ্ধ। দুই ঘণ্টা এইরূপ চলিল। আমাদের বীরবৃন্দ পরাজয় বরণ কিছুতেই করিবে না। তাহাদের মধ্যে ৪০ জন দ্বিগুণ-সংখ্যক শত্রু নাশ করিয়া প্রাণ বিসর্জ্জন দিল। তাহাদের অদম্য তেজে শত্রু বিপর্য্যস্ত হইয়া পশ্চাদপসরণ করিতে লাগিল।

 ঠিক সেই সময় জ্ঞান সিং তাঁহার ৩ নং প্লেটুনের কম্যাণ্ডার সেকেণ্ড্ লেফট্‌ন্যাণ্ট্ রাম সিংকে ডাকিয়া আদেশ দিতেছিলেন। এমন সময় একটি বুলেট আসিয়া তাঁহার মাথায় লাগিল। তিনি পড়িয়া গেলেন; অর্ডার আর তাঁহাকে দিতে হইল না।

 ইহার পর সেকেণ্ড লেফট্‌ন্যাণ্ট্ রাম সিং অবশিষ্ট সেনাদলকে একত্র করিয়া পুনরায় সংগঠিত করিলেন।