পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী
২৯

 আমি বলিলাম—‘তোমরা এখনো আছ? তোমার মা কোথায়?’

 ফয়া কাঁদিয়া ফেলিল। তাহার মা কয়েকদিন হইল মারা গিয়াছে—রাস্তায় বোমার আঘাতে। সে একা। রেঙ্গুন হইতে ১০ মাইল দূরে তাদাগালে গ্রামে তাহার দিদিমা থাকেন। কিন্তু যে রকম লুঠতরাজ চলিয়াছে, ভয়ে সে ঘরের বাহির হয় নাই। প্রায় সব বড় বড় বাড়ীতেই লুঠ হইয়াছে।

 আমি তাহাকে সান্ত্বনা দিয়া আমার অবস্থাও বলিলাম। আমাকে বলিল—‘আপনি যদি আমায় তাদাগালে লইয়া যান, সেখানে দিদিমার কাছে আপনি থাকিতে পারিবেন।’ এ যুক্তি মন্দ নয়।

 ফয়া তাহার জিনিসপত্র একটা ছোট ব্যাগে ভরিয়া আমার সঙ্গে বাহির হইল। আমিও বাসা হইতে আমার সুট্‌কেশটি লইলাম। ফয়ার একটা রিভল্‌ভার ছিল। দু’জনে অন্ধকারের মধ্যে চলিলাম।

 কয়েকদিনের অর্দ্ধাহারে ও অনশনে ফয়া দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিল। সমস্ত দিন পথশ্রমে আমার দেহও অবসন্ন। এইভাবে আমরা দু’জনে প্রায় ৭ মাইল পথ চলিয়াছি—তাদাগালে বোধ হয় আর বেশী দূর নয়। এমন সময় মাথার উপর কয়েকটা এরোপ্লেন্ আসিয়া পড়িল—এক ঝাঁক ভীমরুলের মতন তাহাদের গুঞ্জন নিস্তব্ধ বাতাসকে ভারাক্রান্ত করিয়া তুলিল।

 ফয়া বলিল—‘জাপানী এরোপ্লেন। আমার শরীর ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে। আমি আর দাঁড়াইতে পারিতেছি না।’

 রাস্তার ধারে একটা গাছের নীচে তাহাকে শয়ন করাইয়া দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সে মূর্চ্ছা গেল। একটা ছোট ফ্লাস্কে জল ছিল; একটু লইয়া