বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
আত্মচরিত

 বাংলার কথা বলিতে গেলে, দেখিতে পাই,—“সরকারী লবণগোলার ভূতপূর্ব দেওয়ান বিশ্বনাথ মতিলাল মাসিক আট টাকা বেতনে প্রথম জীবনে কার্য আরম্ভ করেন এবং দেওয়ানী কার্য হইতে অবসর লইবার পূর্বে তিনি ১০।১২ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করিয়াছিলেন বলিয়া প্রকাশ। প্রসিদ্ধ ধনী আশুতোষ দেবের পিতা একজন দেশীয় মালিকের অধীনে মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে কর্ম করিতেন। তৎপরে তিনি ফেয়ারলি, ফার্গুসন অ্যাণ্ড কোম্পানীর ফার্মে কেরাণীর কাজ পান। আমেরিকান জাহাজ ব্যবসায়ীদের অধীনেও তিনি কার্য করেন। শেষোক্ত ব্যবসায়ীরা তাঁহার নামে তাঁহাদের একখানি জাহাজের নাম ‘রামদুলাল দেব’ রাখিয়াছিলেন। এই দুই বিদেশীয় ফার্মের অধীনে কার্য করিয়া তিনি প্রভূত ঐশ্বর্য সঞ্চয় করেন। কলিকাতার রথচাইল্ড, টাকার বাজারের সর্বেসর্বা মতিলাল শীল প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে মাসিক দশ টাকা বেতনে কর্ম আরম্ভ করেন।” (ইণ্ডিয়ান মিরর, ১৪ই আগষ্ট, ১৯১০)

 পরলোকগত শ্যামাচরণ বল্লভ তাঁহার সময়ে একজন প্রধান পাটব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি সামান্য অবস্থা হইতে উন্নতি লাভ করেন। প্রচলিত মত অনুসারে তিনি “শিক্ষিত” ছিলেন না, কিন্তু তাঁহার ব্যবসায়বুদ্ধি ও কর্মপটুতা উচ্চশ্রেণীর ছিল।

 শ্রীযুত ঘনশ্যামদাস বিড়লার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নাই। যদি তাঁহাকে তরুণ বয়সে বই মুখস্থ করিয়া পরীক্ষা পাশ করিতে হইত, তবে তাঁহার একটুও ব্যবসায়বুদ্ধি বা কর্মপ্রেরণা হইত না। শিল্প-বাণিজ্য, মুদ্রানীতি ইত্যাদি সম্বন্ধে তাঁহার অভিমত লোকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে।

 বোম্বাইয়ের ‘টাটা কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কসের’ মিঃ এস, পি, ব্যানার্জি আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে আফিসে নিম্নতম কেরাণী রূপে কাজ আরম্ভ করেন। তিনি ম্যাট্রিকুলেশান পরীক্ষাও পাশ করেন নাই, কিন্তু তিনি আশ্চর্য কর্মশক্তি ও প্রতিভার পরিচয় দিয়াছেন। তাঁহার ফার্ম সাধারণ ইমারতাদি তৈয়ারীর বড় বড় কন্‌টাক্টই যে গ্রহণ করে, তাহা নহে, রেলরাস্তা প্রভৃতি নির্মাণের কন্‌ট্রাক্টও লয়। অপর পক্ষে, যাহারা ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় শিক্ষালাভ করিয়াছে, তাহারা কেবল চাকরী খুঁজিয়া বেড়ায়।

 শ্রীযুত নলিনীরঞ্জন সরকার। ব্যবসায়ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করিয়াছেন। তিনি মাত্র ম্যাট্রিকুলেশান পাশ। কিছুকাল হইল বিবিধ অর্থনৈতিক সমস্যার আলোচনায় তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন। এ সম্বন্ধে তাঁহার বক্তৃতা ও পুস্তিকাদি চিন্তিত তথ্যে পূর্ণ।

 আমি যখন এই কয় ছত্র লিখিতেছিলাম, তখন ঘটনাচক্রে সংবাদপত্রে মিঃ মরিসের একটি বিবৃতির প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল। মিঃ মরিসকে “ইংলণ্ডের ফোর্ড” বলা হয়। মরিস বলিয়াছেন—“ব্যবসায়ের দিক দিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সময়ের অপব্যয় মাত্র। দু-একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকিতে পারে, কিন্তু সাধারণতঃ আমার ব্যবসায়ে দেখিয়াছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কোন কাজে লাগে না। বাণিজ্যক্ষেত্রে যে সব গুণের প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় তাহা দিতে পারে না, বরং ঐরূপ কোন গুণ থাকিলে তাহা নষ্ট করে। আণ্ডারগ্রাজুয়েটদের ধারণা জন্মে যে জীবন অতি সহজ ব্যাপার, তাহারা খেলাধূলা, আমোদপ্রমোদের প্রতিই বেশী মনোযোগ দেয়।”


    বাংলার শিল্পের উন্নতি যে কত কম হইতেছে, এই ঘটনাই তাহার জলন্ত প্রমাণ।” T. G. Cumming:_Technical and Industrial Instruction in Bengal, 1888— 1908 part I, p. 12.”