বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ

বর্তমান সভ্যতা—ধনতন্ত্রবাদ—যান্ত্রিকতা এবং বেকার সমস্যা

(১) পণ্যের অতি উৎপাদন এবং তাহার পরিণাম—বেকার সমস্যা

 ইয়োরোপ ও আমেরিকা হইতে সম্প্রতি যে শোচনীয় বেকার সমস্যার বিবরণ পাওয়া যাইতেছে, তাহা হইতেই বুঝা যায়, পাশ্চাত্য দেশসমূহে কিরূপ আর্থিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হইয়াছে।

 সকলেই জানেন, পৃথিবীব্যাপী আর্থিক মন্দা চারিদিকে কি অনিষ্টকর ফল প্রসব করিতেছে। ইংলণ্ড, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী প্রভৃতি দেশে বেকার সমস্যা অতিমাত্রায় বাড়িয়া চলিয়াছে। ভারতেও বেকার সমস্যার অন্ত নাই, কিন্তু এখানে হতভাগ্য বেকারদের সংখ্যা নির্ণয়ের কোন চেষ্টা হয় নাই। শুনা যায়, আমেরিকায় বেকারের সংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষ। ‘টাইমসে’র নিউইয়র্কের সংবাদদাতা বলেন, “বহু স্থানে মধ্যবিত্ত লোকের অবস্থা শোচনীয় হইয়া উঠিয়াছে। সহস্র সহস্র কেরাণী মজুরের কাজ করিতেছে বা ঐ কাজ পাইবার জন্য চেষ্টা করিতেছে।...এরপ বহু পরিবার তাহাদের সন্তানদের সমস্ত দিন বিছানাতেই শোয়াইয়া রাখিতেছে। কেননা ঘর গরম করিবার জন্য প্রয়োজনীয় ইন্ধন সংগ্রহের ক্ষমতা তাহাদের নাই।”

 “এর চেয়েও শোচনীয় কাহিনী আছে। একটি সংবাদে আছে যে, সহরের কর্তারা সমস্ত জঞ্জালাধার তালাবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছেন, পাছে লোকে রাত্রিতে ঐ সমস্ত স্থান হইতে ক্ষুধার জ্বালায় পচা খাদ্য সংগ্রহ করিয়া খায় এবং তাহার ফলে তাহাদের দেহ বিষাক্ত হয়! একটি লোক একটুকরা রুটি চুরী করিয়া ধরা পড়ে। এই ঘৃণা ও অপমানের ফলে শেষে সে আত্মহত্যা করে। দুর্ভিক্ষ বা বন্যা প্রভৃতির সময়ে আমাদের দেশেও এরপ ঘটনা ঘটিতে দেখা যায়। চরম দুর্দশায় পড়িয়া এদেশের লোক স্ত্রী পুত্র কন্যা বিক্রয় করিয়াছে, আত্মহত্যা পর্যন্ত করিয়াছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আমেরিকার মত ঐশ্বর্যশালী দেশেও এরপ দূরবস্থা হইতে পারে। শুনা যায়, এই সব বেকারদের অভাব মোচন করিবার জন্য ২২ লক্ষ পাউণ্ডের প্রয়োজন। আমেরিকার কোটিপতিদের পক্ষে এই টাকা সংগ্রহ করা কঠিন নহে। আমেরিকায় এত লক্ষপতি, কোটিপতি থাকিতেও, সে দেশে এরপ হৃদয়বিদারক ব্যাপার কেন ঘটিতেছে?” (স্থানীয় কোন সংবাদপত্র হইতে উদ্ধৃত—তাং ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৩০)

 সৌভাগ্যক্রমে এক দল নূতন অর্থনীতিবিদের উদ্ভব হইয়াছে। ইঁহারা সমস্যাটি গভীরতর ভাবে দেখিয়া জগদ্ব্যাপী বেকার সমস্যার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করিয়াছেন। প্রায় দুই বৎসর পূর্বে (১৯২৮) কলিকাতার স্টেটসম্যানে নিম্নলিখিত মন্তব্য প্রকাশিত হয়:—

 “পাশ্চাত্য দেশ সমূহে শিল্প বাণিজ্যের যে সঙ্গীন অবস্থা হইয়াছে, তাহার প্রতিকারের একমাত্র পথ উৎপন্ন দ্রব্যের পরিমাণ হ্রাস করা। কিন্তু ইহার ফলে বেকার সমস্যার সৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী। দুইটি শিল্পের কথাই ধরা যাক, আমেরিকা ছয় মাসে যে পরিমাণে বুট ও জুতা তৈরী করে তাহাতে তাহার এক বৎসর চলে, এবং সতের সপ্তাহে এক বৎসরের