পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[  ]

বদ্ধমূল হয়। এই সময়ে যেরূপ বাঙ্গালা সাহিত্যের বিকাশ হয়, সংস্কৃতচর্চ্চার শ্রীবৃদ্ধি হয়, এবং ধর্ম্মানুশীলনের উন্নতি হয়, সেইরূপ বঙ্গের শিল্পবাণিজ্যেরও গৌরববৃদ্ধি হইতে থাকে। গোবিন্দ দাস প্রভৃতি কবিগণ এই সময়ে চিত্তবিমোহিনী কবিতারচনা করিয়া বাঙ্গালা সাহিত্য গৌরবান্বিত করেন। পণ্ডিত বাসুদেব সার্ব্বভৌম এই সময়ে ন্যায়শাস্ত্রের আলোচনা করিয়া নবদ্বীপ উজ্জ্বল করিয়া তুলেন, রঘুনাথ শিরোমণি এই সময়ে চিন্তামণিদীধিতিপ্রণয়ন করিয়া সমগ্র সভ্যজগতে চিরপ্রসিদ্ধি লাভ করেন, আর চিরপবিত্র ভগবৎপ্রেমে বিশ্ববিজয়ী বিশ্বস্তর এই সময়ে চৈতন্য নামে পরিচিত হইয়া, মোহাচ্ছন্ন জগতে চেতনা সঞ্চারিত করেন। পক্ষান্তরে বাঙ্গালার সোণারূর অলঙ্কার,—বাঙ্গালার কাপড়, এই সময়ে সর্ব্বত্র আদরসহকারে পরিগৃহীত হইতে থাকে। ইউরোপের বিলাসিনীগণ স্বদেশের বস্ত্র দূরে ফেলিয়া, ঢাকার মস্লিনের সম্মান করিতে থাকেন। মুসলমান ভূপতিগণ আধুনিক ইতিহাসে যথেচ্ছাচারী ও পরানিষ্টকারী বলিয়া নিন্দিত হইতেছেন, অনেক ইঙ্গরেজ ঐতিহাসিক এখন নাসিকা সঙ্কুচিত করিয়া, কলঙ্কের মন্ত্র উচ্চারণ পূর্ব্বক, এই ভূপতিদিগের পরলোকগত আত্মার সন্তৃপ্তিসাধনে প্রয়াস পাইতেছেন, কিন্তু এই যথেচ্ছাচারপরায়ণ অধিপতিগণের রাজত্বে, আমাদের দেশে যে সম্মোহন দৃশ্যের বিকাশ হইয়াছিল, উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, সুসভ্য ব্রিটিশ রাজত্বে সে দৃশ্যের আবির্ভাব হইতেছে না। তখন আমাদের সাহিত্যে, আমাদের কথপোকথনে, বিজাতীয় ভাবের আবির্ভাব হয় নাই। মাঞ্চেষ্টর তখন আমাদের লজ্জানিবারণের ভার গ্রহণ করে নাই; বার্ম্মিংহাম বা সেফাল্ড, লণ্ডন বা লিবরপুল, তখন আমাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসংগ্রহে তৎপর হয় নাই। যাঁহারা আমাদের সমক্ষে অত্যাচারী বলিয়া পরিকীর্ত্তিত হইতেছেন, তাহাদের রাজত্বে আমাদের জাতীয় ধর্ম্ম অক্ষত