পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

‘ঐইটে আমার—ঐটাকে ছুঁয়োনা’ “ঐটে তোমার—ঐখানেই সারা জন্ম ঘুর ঘুর করে মর”। আমাদের মন হচ্ছে হিসাবী লোক, লাভ লোকসান খতিয়ে সে চলে, নিয়মকে—ব্যবস্থা পত্রকে কঠিন দুর্লঙ্ঘ্য করে সে বাঁধে, পান থেকে চূণ খসলে সে ভাবে চৌষট্টি নরক তার নীচে হাঁ করে রয়েছে তাকে গেলবার জন্য। অথচ বিবাহের বা মিলনের প্রধান জিনিষটা হচ্ছে হৃদয় বিনিময়—ভালবাসা, প্রেমকে বাদ দিয়ে বিবাহ হয়ে পড়ে প্রহসন, ব্যভিচার। দেহের ক্ষুধা মেটাবার ব্যবস্থার নামই যদি হয় বিবাহ তা’হলে রামকে বাদ দিয়ে রামায়ণের মত প্রেমকে বাদ দিয়ে বিবাহ একটা পাশব ব্যবস্থা ছাড়া আর কি? পরিবারে আমি দেখিছি অতি নিকট আত্মীয়ে আত্মীয়ে প্রণয়, যারা সারাটা জীবন হয়তো এক পরিবারের বাঁধনে পরস্পরকে কত না সুখে দুঃখে ধরে একত্র থাকে, তাদের একজন আর এক জনকে টানবে এ তো খুবই স্বাভাবিক। তবু কিন্তু বিজ্ঞানের হুকুম, সমাজের ব্যবস্থা এই যে—রক্তের সম্বন্ধ যেখানে গাঢ় ও নিকট সেখানে মিলন অবৈধ। কাজেই কত না পরিবারে কত না প্রেম অন্তঃসলিল হয়ে মরেছে, অন্ধকারে ঘুলিয়ে ঘুলিয়ে পাঁক তুলছে, গোপন ভ্রূণহত্যা, নারীঘাত ও প্রবঞ্চনার সৃষ্টি করছে। মানুষের মনগড়া নীতির সামাজিক জগতে তাই পাপের অপরাধের ও মনস্তাপের আর অন্ত নেই।

 মানুষ ভুলে যায় যে, মানুষ শুধু মন নয়, শুধু প্রাণ নয়; প্রাণ, মন, হৃদয় ও দেহ এই চারটেকে নিয়ে সে একটা গোটা সত্তা।

৯৫