পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 এত অল্প বয়সে কবি হবার আর এক কারণ এই বয়সে আমার প্রথম প্রেমে পড়া। আমার সে প্রেমের পাত্রীকে যখন প্রথম দেখি তখন সে দশ বছরেরটি। বড় বড় ভাষা চোখ, গৌর বর্ণ, নাতি দীর্ঘ কিশোর তনু। এই ভালবাসা গভীর হয়ে আমার হৃদয় ও প্রাণসত্তা জুড়ে তের বছর অবধি ছিল। ব্রাহ্ম সমাজে বাল্য বিবাহ নেই, উপার্জ্জনক্ষম না হয়ে অন্ততঃ ছেলেরা সে সমাজে বিয়ের কথা ভাবেই না। আর অত ছোট বয়সের ভালবাসায় অতদূরের হিসেব কি থাকে? তার ওপর সে ছিল আমার নিকট আত্মীয়া, আমিও ছিলুম কবি, দেহ সম্বন্ধটার ওপর ছিল নবোঢ়ার ভয় সঙ্কোচ ও ঘৃণা। মাটির বুকের পদ্মটির জন্য আকাশচারী চাঁদের অতৃপ্ত আকুল পিয়াসা; পনরটি দিন ধরে কলায় কলায় পূর্ণ হয়ে উঠতে উঠতে সারা হৃদয় মণ্ডলের কিরণ ঢেলে দয়িতকে ছোঁওয়া, ঘিরে থাকা, ব্যাকুল করা, তাকে আলোর বন্যায় ডুবিয়ে রাখা আর তার পর তাকে না পাওয়ার শোকে আবার নীরবে কলায় কলায় ক্ষয়ে যাওয়া। এই রকম ছিল আমার কামগন্ধহীন সেই কৈশোর যৌবনের কবিত্বগাঢ় স্বপ্নালু প্রেম।

 মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির কি যে হিসেব,—মনের কৃত্রিম খোপ কাটা কাটা ভাল মন্দের উচিৎ অনুচিতের সে উদ্ভট মনগড়া রাজ্য,—সে হচ্ছে একটা আধ-আলো আধ আঁধারের ঘরকন্না। নিজেদের ছোট ছোট ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থবুদ্ধি ও হিসাব কিতাব থেকে মানুষ সেখানে গণ্ডী কেটে নিয়েছে,—

৯৪