পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

আমার মনে পড়ে। গৌরকান্তি পুরুষ, চিরকুমার, স্বাধীনচেতা, ইংরাজ-বিদ্বেষী বড় মামা আমার জীবনে কখন সরকারী চাকুরী করেন নি, নইলে দাদাবাবুর বন্ধু সার হেন্‌রি কটন আদির আনুকূল্যে তিনি অনেক উচ্চপদই পেতে পারতেন। সে কালে শুধু কাগজে লিখে মাসে দেড় শ, দু’শ, কখন কখন আড়াই শ’ টাকা অবধি তিনি রোজগার করেছেন। বেঙ্গলী, ইণ্ডিয়ান মিরর, হোপ, অমৃত বাজার আদি কাগজে তাঁর লেখা সম্পাদকীয় স্তম্ভে প্রধান প্রবন্ধ হয়ে বের হতো। সাংবাদিক Journalistic ইংরাজি তিনি লিখতে পারতেন অতি চমৎকার।

 দাদাবাবু রাজনারায়ণ বসুর বংশটাই ছিল ইংরাজ-বিদ্বেষী। যৌবনে ভারত মেলার অনুষ্ঠান করে দাদাবাবুরা বিরাট জনসভায় গোটা কয়েক মঞ্চ করে তার ওপর দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করাতেন কবি হেমচন্দ্রের “বাজ রে শিঙ্গা বাজ এই রবে, সবাই স্বাধীন এ বিপুল ভবে, ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয়”, তাঁদের অদ্ভূত গুপ্ত সমিতির কথা আত্মকাহিনীতে ইতিপূর্ব্বেই লিখেছি। পথে চলতে চলতে শ্বেতশ্মশ্রু সেই কুব্জ মানুষটি ইংরাজ দেখলেই সগর্ব্বে বুক ফুলিয়ে চলতেন, কটমট করে রক্ত চক্ষে সে বেচারীর দিকে চাইতেন, দাঁতে দাঁত দিয়ে ঘুঁসি পাকিয়ে মনের ঝাল তাঁর মেটাতেন। অথচ কোন ভাল ইংরেজ বাড়ীতে এলে সৌজন্য ও ভদ্রতার অবধি থাকতো না। সিপাহী যুদ্ধের কত গল্পই আমরা দিদিমা, দাদাবাবু ও বড় মামার মুখে শুনেছি।

 হেডমাষ্টার যোগীনবাবুর সঙ্গে জুটে বড়মামা কিছুদিন

১০২