পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

অনেক ইঙ্গিত-ইসারা দিয়েও বাঁকিপুরের চায়ের দোকানের জন্যে টাকা বের হ’লো না, তিনি স্পষ্ট ‘হাঁ’ ‘না’ কিছুই না বলে ‘বোবার শত্রু নেই’ নীতিটি অনুসরণ করে যেতে লাগ্‌লেন। টাকার সম্বন্ধে সেজদা’র কস্মিন কালে মায়া ছিল না, কিন্তু যেটা পছন্দ করতেন না সেটার সিদ্ধির উদ্দেশ্যে উপুড়হস্ত হবার পাত্র তিনি নন। ব্যাপারখানা বুঝে আমি দোকানী জীবনের যবনিকা তোলার আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে বরোদায়ই বসে রইলুম। রাঙা মা আমার সেখানে আশা-নিরাশার উৎকণ্ঠায় একা পড়ে তাঁর হারানো চোখের মণিটিকে মোরিয়া হয়ে বার বার করুণ পত্রাঘাত কর্‌তে লাগলেন।

 ইতিমধ্যে বাঁকিপুরে প্লেগ আরম্ভ হ’লো। বর্দ্ধমান থেকে আনা চাকরটি প্লেগ হয়ে সেই বিদেশ বিভূঁইয়ে মৃত্যুমুখে পড়লো, মা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে তার সেবা-শুশ্রূষায় বসে গেলেন। তখনকার অবস্থা সহজেই অনুমেয়। প্রকাণ্ড ব্রাহ্ম দোকানদার আমাদের ভাঙা দোকানের প্রাপ্য টাকা নিত্য তাগাদায়ও দিচ্ছে না, সহরে ভয়াবহ প্লেগের ত্রাস, ঘরে ঘরে কান্নার আকাশ ফাটা রোল, হাজারে হাজারে মানুষ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। ঘরে প্লেগের রুগী শুষ্‌ছে, বন্ধু আত্মীয় বল্‌তে কেউ কোথায়ও নেই, তাঁর অন্ধের যষ্টি সন্তান বার-চোদ শ’ মাইল দূরে বরোদায়। এই সব খবর পেয়ে সেজদা’কে অনেক বলেও ফেরবার রেল ভাড়ার টাকাটুকুও যখন আমি পেলুম না, অগত্যা তখন কলকেতায় বন্ধু সুরেনকে তার করে দিলুম।

১৬৬