পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 একদিন চাকরটি মারা গেল। অতি কষ্টে তার সৎকারের ব্যবস্থা করে এক বস্ত্রে মা গিয়ে পাল বাবুর শরণ নিলেন, তাঁরা প্লেগের ছোঁয়াচের ভয়ে মাকে উঠানের দুয়ার অবধি ছাড়া আর বেশি ঢুকতে দিলেন না। সৌভাগ্য ক্রমে ইতিমধ্যে সুরেন আমার ও মায়ের তার পেয়ে এসে মাকে কলকেতায় নিয়ে গেল। এইভাবে আমাদের বাঁকিপুরী দোকানী জীবনের পালার ট্র্যাজিডি সর্ব্বস্বান্ত দশার মধ্যে সাঙ্গ হলো আর আমার বরোদার আয়েসী কাব্যি জীবনের হ’লো আরম্ভ।

 বরোদার বাড়ীর অন্দরের দিকে একটি ঘরে পড়লো আমার আস্তানা। সেইখানে কবিতার খাতা, এস্রাজ, বাগানের সরঞ্জাম আর নভেলের কাঁড়ি নিয়ে আমি পাতলুম নতুন করে আড্ডা। দুপুর বেলা খাওয়া-দাওয়ার পর আর রাত্রে খানিকটা সময় সেজদাও এইখানে আমার ঘরে এসে গল্পগাছা করে যেতেন। যখন দিদি ও বৌদি’ বরোদায় থাকতেন তখন তাঁরাও সেই দলে ভিড়ে নীচেই দুপুরের শান্ত কপোত-কূজিত বেলাটুকু কাটিয়ে দিতেন। বাড়ীর পিছনে আস্তাবলের কাছে অনেকটা জমি খালি পড়েছিল, সেইটুকুকে বাঁশের ও বাঁকারীর বেড়ায় ঘিরে নিয়ে আমি কপি, কড়াই শুঁটি ও বিট গাজরের বাগান করে নিয়েছিলুম। আমাদের বাড়ীর এই দিকটার পাঁচিলের ও-পারে বস্তির মাঝে একঘর লোক ছিল; তারা ভাই, বিধবা বোন ও বড় ভাইএর বউ ও তার কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে ক’জনায় মিলে খড়ের কুঁড়েয়ই সংসার পেতেছিল। এই পেটরোগা খোঁড়া ভাই

১৬৭