পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

করে প্রাণ জুড়িয়ে যেতেন তার তো হিসাব হদিস্ ছিল না, তাঁদের কত কথাই সত্য ঘটনার সঙ্গে মিলতো না, কত আবোল তাবোল প্রলাপ কখনও আমরা অম্লান বদনে হজম করে যেতুম কিন্তু তাতে সে সব স্পিরিটদের খ্যাতি প্রতিপত্তি আমাদের কাছে যে বিশেষ কমতো তা’ নয়। শ’ দু’শ message পারলৌকিক বাণীর মধ্যে দশটা মিললেই ভূতযোনির ওপর বিশ্বাসের পারা অমনি চড়চড় করে পাঁচ ডিগ্রি উঠে যেত। আমাদের দেশে এবং যে কোন দেশে এত হাতুড়ে কবিরাজ ডাক্তার, এত বুজরুগ সন্ন্যাসী গণক, এত অগণ্য গুরুপুরুত যে করে খাচ্ছে তার কারণই মানুষের প্রাণের এই অন্ধ বিশ্বাস প্রবণতা। আগা এবং পাছতলার অংশটুকু ছিঁড়ে বাদ দেওয়া জীবনের এই মাঝের পাতাটুকুর অর্থ এবং রহস্য জানবার জন্যে আমাদের এমনই ব্যাকুলতা যে কোন একটা কিছু বিশ্বাস করবার জন্যে আমরা যেন ব্যাকুল হয়েই আছি। অন্ধ যেমন একটা কিছু লাঠি বা একজন কারুর হাতের ভর পেলেই তার কাছে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে বেঁচে যায়, কালের পথে অন্ধ আমরা তেমনি কাউকে যা হোক কর্ণধার হিসেবে পেলেই বেঁচে যাই। সে শুধু কপা করে বললেই হ’লো যে সে সবজান্তা ত্রিকালদর্শী মহাপুরুষ।

 আমাদের সত্তা হচ্ছে মেঘস্পর্শী গিরিশৃঙ্গের মত—মাটির তলায় যার মূল ও ভিত্তি রয়েছে কতনা দূর অবধি স্তরে স্তরে লুকানো আর মেঘলোকের উপরে ঢাকা রয়েছে যার সূর্য্যালোকে

১৭৬