পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 পাগল হয়েও আমাদের মা এড়াতে পারেন নি, অধিকন্তু তাঁর পাগলামীর খেয়ালে ও রাগে আমাদের চোখে মা আমাদের হয়ে ছিলেন ভয়ানাম্ ভয়ং ভীষণং ভীষণানাম্। একদিকে মায়ের নির্ম্মম মারের ভয় আর একদিকে খোলা মাঠের বাগানের ঝোপঝাড়ের ঝুপসীর কাশবনে ঢাকা সাদা খেজুর তলার টান। শেষে প্রকৃতিরই হতো জয়। আমি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মাকে শুনিয়ে এক কল্পিত দিদির সঙ্গে করতাম গল্পগুজব আর দিদি রুদ্ধশ্বাসে একছুটে চলে যেত খেজুর তলায় বা কলমের আম বাগানে বা পিচগাছের নীচে পাকা পাকা পিচফলের সন্ধানে। আবার দিদি এসে দিত গল্প জুড়ে এক কল্পিত সাজানো আমার সঙ্গে আর আমি দিতাম ভোঁ দৌড়।

 মাঝে মাঝে মা আমাদের পাল্কী করে নিয়ে যেতেন দেওঘরে দিদিমার বাড়ী। সেখানে বেহারাদের এহুম্ ওহুম্ রবে আকাশ পথ মুখরিত করে আমরা গিয়ে নামতুম একঝাঁক মামা মাসী মাসতুতো ভাই ও বোনের পালে, কত পিঠে চন্দ্রপুলী সন্দেশ ও লুচির রাজ্যে। রাজনারায়ণ বসুর পুরন্দাহার বাড়ী তৈরী হবার আগে দিদিমারা থাকতেন থানার সামনে রেল লাইনের ধারে একটা বাড়ীতে। তার অন্দরের দরজায় বাইরের দিকে ছিল একটা বাঁধানো রকের মত বসবার পৈঁটে, তারই ওপর ছেলে মেয়ে নাতী নাতনী নিয়ে ভিড় করে দিদিমা এসে আমাদের পাল্কী থেকে নামিয়ে নিতেন। আমাদের কাপড় ছিল পাগলী মায়ের নিজের হাতের কাটছাটের সেলাই

২৭