পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

মধ্যে থেকে—এমনিতর আধ পথের কত না জায়গা থেকে পাগলটা আনতো দিদির চুলের মুঠি ধরে। তার পর চলতো আরও দুর্জ্জয় প্রহার। ছেলে পুলে পশুর জাত, তেমনি লোভী ও স্বার্থপর, তেমনি হিংসুটে ও সরল,— মায়ের মন পাবার জন্যে আমি কত রকমে লাগিয়ে ভাঙিয়ে দিদিকে আরও বেশি বেশি করে মার খাওয়াতাম যাতে আমার ভাগের মারটা কিছু কম পড়ে।

 অসহ্য ভয়ের ও দুঃখের শোণিত-রেখায় আঁকা শৈশবের এই রোহিণীর জীবন,—কালো জমাট দুঃখের মেঘের ফাঁকে ফাঁকে জরির পাড়ের মত বাল্যের স্বাভাবিক অনাবিল আনন্দের রশ্মি। এ রকম জীবনে মায়ের স্নেহ-কোল—সে অনুপম প্রেমবিধুর মাতৃছবি বুঝবার অবসর কোথায়? আসলে আমাদের মা থেকেও ছিল না। গল্পের রাক্ষসী বা জটে বুড়ীকে শিশু-মন যেমন ভয় করতে শেষে আমার কাছে মা ছিল তেমনি আতঙ্কের বস্তু। তবু এরই মাঝে পাগলী মা যে কতখানি ভাল আমায় বাসতেন তা’ পরের জীবনে বুঝেছি। বাবা তখন খুলনার সিভিল সার্জ্জন। দুঃস্থের ও দরিদ্র রোগীর সেবা, দু’হাতে দান খয়রাত আর মদ তাঁর ছিল নিত্য সঙ্গী; অর্থোপার্জ্জন করতেন বিস্তর এবং তা’ দু’হাতে ওড়াতেন পরের জন্য। প্রার্থী কখনও কিছু চেয়ে তাঁর কাছ থেকে নিরাশ হয়ে ফেরে নি, অত বড় হ্যাট কোট পরা মদ্যপ ডাক্তার সাহেব রাত বারোটায় এক হাঁটু জল কাদা ভেঙে গরীব চাষী রোগীকে দেখতে গেছেন বিনা

৩০