পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

সময় ছিল যখন মা ক্ষেপতেন। পাগলের আসতো রাগের ঝড় আর আনন্দের ঝড় পালাপালি করে, আনন্দে আপন মনে খল খল করে হাসতেন আর অনর্গল বকে যেতেন, রাগে পিঁজরায় বদ্ধ বাঘিনীর মত ঘরে করতেন পায়চারী আর যেন কাদের উদ্দেশে তর্জ্জন গর্জ্জন। বাবা ও দাদাবাবুকে লক্ষ্য করে বলতেন, “শ্বশুর জামাইকে এক ফাঁসী কাঠে লটকাও।” রাগের মাত্রা বাড়লে আমাকে ও দিদিকে মারতেন নির্দ্দয় হয়ে, কিল ঘুসি, খিমচি, কাণমলা, চুলটানা, চ্যালা কাঠের বাড়ি যখন যা’ খুসী। দিদিকে মারতেন সবচেয়ে বেশী, কারণ ওরই মধ্যে কোলের ছেলে আমাকে একটু ভালবাসতেন দিদির চেয়ে বেশী। এখনও নির্দ্দয় দৃশ্য আমার মনে গাঁথা আছে, দিদি উপুড় হয়ে পড়ে আছেন আর মা তাঁর পিঠের উপর বসে গুম্ গুম্ করে কিলোচ্ছেন আপ্রাণ বেগে।

 আমার মা ছিলেন পাগল, পাগলামীর ঝোঁকে করতেন মারধর; কিন্তু অনেক মা বাপকে রাগের বশে দেখেছি ছোট ছোট কচি ছেলে মেয়েকে প্রায় এমনি নির্দ্দয় হয়েই ঠেঙাতে। রাগ কাম ও দর্পের বশে আমরা কত বারই যে পাগল হচ্ছি Temporary insanityর ছোঁয়াচ লেগে। কখন কখনও মার সহ্য করতে না পেরে দিদি ছুট দিতেন বাড়ীর কম্পাউণ্ড পেরিয়ে মাঠের পথে দিদিমাদের বাড়ীর দিকে। একটা পাগল বামুন মাঝে মাঝে আসতো ভিক্ষা করতে, তাকে মা দিতেন দিদিকে ধরে আনতে লেলিয়ে। দাড়োয়া নদীর বাঁক থেকে, মাঠের

২৯