পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

দশ বার জন জোয়ান। মা তো রেগে কাঁই, দৌড়ে ভিতরে গিয়ে ছোৱা এনে উর্দ্ধশ্বাসে গুণ্ডার পালকে তাড়া! আর মাটিতে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে টানতে টানতে আমাকে নিয়ে গুণ্ডার পালের প্রাণ হাতে করে ছুট। পা’ দু’খানা আমার মাটিতে কাঁটা বনে কত জায়গায় ছড়ে গেল। আমাকে যে কোলে তুলে নেয় তাদের তার অবসরটুকু এবং একটুখানি থামবার সাহস অবধি ছিল না, ও-অঞ্চলে মায়ের এমনি ছিল দোর্দ্দণ্ড প্রতাপ।

 রোহিণীর বাড়ীর কম্পাউণ্ডটা প্রকাণ্ড ব্যাপার, প্রায় ১৫।২০ বিঘের ওপর জমিতে বাড়ীখানা। এতখানি পথ পার হয়ে যেখানে আম বাগানে আমাকে ওরা ছেড়ে দিয়ে হাঁপ ছাড়লো, সেখানে দেখলুম সেই মোটা বাবুটি দাঁড়িয়ে, সামনে একটা আট-বেহারার পাল্কি হাজির রয়েছে। বাবুটি আমাকে তাড়াতাড়ি পাল্কির মধ্যে দিলেন পুরে, পাল্কি লোক লস্কর ঘেরাও হয়ে চললো উড়ে সোজা উত্তর মুখো; বাবুটি হাঁপাতে হাঁপাতে পাশে পাশে ছুটলেন, আমাকে ভয়ে আড়ষ্ট দেখে বললেন, “ভয় কি, তোমার রাঙ্গা মায়ের কাছে যাচ্ছ। সে মস্ত সহর, কলকেতা, কত ঘোড়। গাড়ী।” আমি তখন শুধু সভয়ে রোহিণীর বাড়ীর দিকে চাইছিলুম, মায়ের চীৎকার শুনছিলুম আর বার বার জিজ্ঞেস করছিলুম, “মা কি আসছে নাকি, আমাদের ধরে ফেলবে নাকি?”

 বাবু। উঁহু! সেটি আর পারছে না। আমরা এথনি গিয়ে গাড়ীতে উঠে হুস্ হুস্ করে দেব পাড়ি কলকেতামুখো।

৩৮