পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 এই ভাবে রাবণ রাজার দ্বারা বনবাসিনী সীতাহরণের মত আমার হরণ দিয়ে হ’লো আমার নতুন জীবনের সূত্রপাত। সেই প্রথম রেলে চড়লুম—জসিডি জংশনে এসে। প্রথম দফায় বাবুটি একঠোঙা জল খাবার দিলেন হাতে। সে কি বিপুল মুক্তির আনন্দ! সে কি আনন্দ সমারোহের নবীন জগৎ আমার চারিদিকে! বোধ হয় বেলা দশটা বা এগারটার একটা গাড়ীতে আমরা চড়ি আর সেই দিন সন্ধ্যার পর রাত্রের অন্ধকারে কলকেতায় পৌঁছাই। সমস্ত রাস্তা এই অজ্ঞাত অপরিচিত রাঙ্গা মার সম্বন্ধে নানা প্রশ্নে বাবুটিকে উস্তোম ফুস্তোম করে মেরেছি। আমার সমস্ত শিশুচিত্ত ও কল্পনা জুড়ে তখন রূপ নিচ্ছে ঠাকুরমার গল্পের রাজরাণীর মত এই রাঙ্গা মা। বালকের মত সহজ আর কি আছে, তাই তার কাছে ভাল মন্দের হিসাব বুদ্ধি নেই। মানুষকে সে হৃদয় দিয়ে প্রাণের তত্ত্ব দিয়ে ঠিক অবুঝ লতার মতই আঁকড়ে নেয়

 আর, তার পর কলকেতা। দশ বছর অবধি যে বনে জনকোলাহলের বাইরে একেবারে অজ্ঞানে, মানুষ হয়েছে সেই বালকের চোখে হঠাৎ-দেখা এই মুখর নগরীর আলোর হাজারনরী হার, এই সমারোহ, এই জন-কোলাহল, এই বিচিত্র সারি গাঁথা বাড়ীর ভিড় কি যে যাদু করতে পারে তা বলে বোঝান সহজ নয়।—লেনের একটা দোতলা বাড়ীতে নিয়ে ওরা আমায় তুললো। তখনকার দিনে মটরকার ছিল না, ছিল অগুন্তি

৩৯