পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

জন্যে অতি উদ্ভট আরব্য কাহিনীর মনগড়া গল্প জোড়াতালি দিয়ে বলে যাচ্ছে, যাকে কখন কোন সমালোচকের কাছে জবাবদিহী করতে হবে না। রাজনারায়ণ বসুর প্রতিভায় জাত তাঁর পাগলী মেয়ে আমার মা, প্রকাণ্ড শক্তিধর পুরুষ অথচ ভালবাসায় সৌন্দয্যের মোহে সহজে আকৃষ্ট নারীর অধিক কোমল উন্মার্গগামী কৃষ্ণধন আমার বাবা, যাঁদের ঔরসে ও গর্ভে জন্মেছেন মেজদা——মনোমোহনের মত অপূর্ব্ব কবি, সেজদা শ্রীঅরবিন্দের মত শতমুখী প্রতিভার বিরাট পুরুষ; সেই শক্তির চঞ্চল ইতস্ততঃ বিশপী শিখায় আমার জন্ম। তাঁদের সব দুর্ব্বলতা ও কিছু কিছু শক্তি ও প্রতিভার স্ফুলিঙ্গ নিয়ে ধূমে ও আলোকে কৃষ্ণজ্যোতির্ম্ময় আমার এই সত্তা জন্মেছে। এর কাহিনী বলা কি সহজ? না, তার সব কয়টি পাতা এই ক্রুর জগতের সামনে খুলে দেখাবার জিনিস? রূপে ঢল ঢল কমল—বর্ণে গন্ধে সব কয়টি পাপড়িতে সমগ্র হয়েই না সে এমন অনুপম, এতখানি মনোহারী। তাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুষ্ক উদ্ভিদ-তাত্ত্বিকের দৃষ্টিতে দেখলে সে রক্তকমল কি তেমন অপার্থিব আনন্দ দিতে পারে? মানুষের অন্তরের আসল মানুষটির—গোপন পুরীর রাজকন্যার কথা যে সেই রকম। বইয়ের পাতায় বস্তুতান্ত্রিক প্রকাশকের আলমারীতে দপ্তরীর জ্বলজ্বলে বাঁধাইয়ের বাঁধনে মোড়া যে জীবন-কাহিনী তোমরা পড় তাতে কি সত্যিকার বিদ্যাসাগরকে, আসল দেশবন্ধুকে, খাঁটি রবীন্দ্রনাথকে পাও? সে রকম জীবনী আজও বাঙলা সাহিত্যে কেউ লেখে নি, আর সে খাঁটি জীবনের,

৪১