পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

ছ্যাকরা গাড়ী। নীচে ছুটে এসে আমায় কোলে করে নিলেন এতক্ষণের রহস্যে ঘেরা রাঙা মা।

 দীর্ঘছন্দ সবল বলিষ্ঠ দেহ, অপূর্ব্ব রূপ সারা যৌবনসুঠাম অঙ্গ বয়ে ঝরে পড়ছে। বয়স আন্দাজ ১৮।১৯ —অন্ততঃ এখন তাই মনে হয়। আমার জরাজীর্ণ শতছিদ্র কাপড় ছাড়িয়ে মা আমায় গরম জলের গামলায় ফেলে সাবান ও স্পঞ্জ দিয়ে ধুয়ে মুছে তুললেন, ধোয়া কাপড় পরিয়ে বুকে চেপে ধরে সে কি আদরের ঘটা। সন্তানহীনা সেই বালিকার প্রাণ হৃদয় মন সব অন্তরটুকু আমি এক মুহূর্ত্তে হরণ করে নিয়েছিলুম। দিদি এসে মুখটি চূণ করে সামনে দাঁড়াল। রাঙা মায়ের সঙ্গে দিদির আমার বনতো না, চির অভিমানিনী সহজে কোপনা দিদির সঙ্গে কারই বা তখন বনতো!

 এই—গলির বাড়ীটি দিয়ে আরম্ভ হ’লো আমার কলকেতার জীবন। আমার ৫০ বছর বয়স ধরে পটের পর পট পড়েছে আর উঠেছে, বিয়োগে মিলনে অশ্রুতে নৃত্যে—জমকালো কত না ঘটনার রসবৈচিত্র্যে এ অভিনয় পরিপূর্ণ। সমুদ্রের পরপারে আমার জন্ম—সেই-ই শ্বেতদ্বীপের যক্ষপুরীতে—তাই বলছিলাম এ অভিনব জীবনের একেবারে গোড়া থেকেই অসাধারণ ও উদ্ভট, যা কারু হয় না বা খুব কম লোকের হয় তাই দিয়ে পরিচ্ছেদের পর পরিচ্ছেদ আমার জীবন-নাটিকাটি লেখা হয়েছে। বাহির থেকে দেখতে গেলে যেন এর কোন ছন্দ নেই, কোন কল্পনা-বিলাসিনী ঠাকুরমা যেন নিতান্ত অবুঝ নাতি নাতনীর