পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 মায়ের তাসের আড্ডায় একজন ইহুদী ছেলে আসতো যেতো, জিনের ইজের কোট পরা, মাথায় জরিদার ইহুদী টুপী, মুখে দিবারাত্র সিগারেট, শিস আর গান; চঞ্চল, সর্ব্বদা হাসি-খুসী আমোদ ইয়ারকীতে মশগুল; এ ছেলেটি এসেই দুপুরে তাসের আড্ডা জমে উঠতো খুব। ছেলেটা ভবঘুরে, কোথায় ব্যাণ্ডের দলে ঢুকে ক্ল্যারিয়নেট বাজাতো, আর একটি ধনী ইহুদীর পরমা সুন্দরী মেয়ের প্রেমে হাসি খুসির ফাঁকে ফাঁকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতো। একদিন তার মায়ের সঙ্গে মেয়েটি আমাদের বাড়ীতে নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল, আমাদের সঙ্গে হুটোপাটি করে লুকোচুরি খেলেছিল। লম্বা ছিপছিপে, রসে ঢলঢল লতার মত, গৌরাঙ্গী, কালো নিবিড় চোখ, প্রবালের ঠোঁট, একমাথা ঘনকৃষ্ণ চুল,—এই ছিল ইহুদী ছোকরার উপাস্য দেবী—তার জীবনের সুদূর দিগন্তের চাঁদ। তারা বড়লোক আর এ বেচারী গরীব, তার ওপর সে জীবনের জলের ওপরে ভাসমান বোহেমিয়ান শ্যাওলা,—ব্যাণ্ড-বাজিয়ে বওয়াটে ছেলে। সামাজিক মানুষের কাছে প্রেম ভালবাসা জাতীয় আকাশ কুসুমের চেয়ে মোটা মাহিনার চাকরীর দর অনেক বেশি। মেয়ের জীবনের সুখ মানেই সোণা দানা পোলাও পরমান্ন দাস দাসী বাড়ী গাড়ী, ছেলেটি হয়তো বড় ঘরের পাঁঠা—মদে ও আনুষঙ্গিকে ডুবে আছে; তা হোক, তবু কত বড় ঘর! তাই বলি মানুষের চেয়ে শিক্ষিত মর্কট আর আছে?

৫২