পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

অথর্ব্ব কেসো রুগী গয়লা। আমাদের বাড়ীর আর এক দিকে থাকতো আর এক বুড়ী, তার ছিল ৪০ টা বেরাল; সে বুড়ী ছাদে বড়ী বা আমসত্ত্ব দিলে সেই চল্লিশটা বেরাল ঘিরে বসে কাক তাড়াতো এবং পাহারা দিত। এই গোমস্ লেনের বাড়ী থেকে সেজেগুজে আমরা সাহেবী চালে ফিটন গাড়ীতে চড়ে যেতুম মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে বাজার করতে আর ময়দানে হাওয়া খেতে। তখন ট্যাক্‌সী মটর লরী বাস প্রভৃতি গর্দ্দভরাগিণীওয়ালা পদার্থ ছিল কল্পলোকে, কলকেতা সহর ছিল ছ্যাকরা গাড়ীর ছ্যাড়-ছ্যাড়-ছ্যাড় রবমুখর স্থান।

 আমাদের গোমস্ লেনের বাড়ীর সংসারে যে ক’জন ছিল অন্তরঙ্গ তাদের ৩।৪ জনকে আমার মনে আছে। বাবা একটী দরিদ্র ব্রাহ্মণ সন্তানকে লেখাপড়ায় সাহায্য করতেন, সে আমাদের সংসারে আমাদেরই একজন হয়ে থাকতো। বড় লোকেরা যেমন গরীর ছেলে পোষে আর তাকে বাজার সরকারের মত খাটায় তেমন নয়,—তাকে ঘরের ছেলের মত এক অন্নে সেণ্ট জেভিয়ার কলেজে পড়ানো হতো। তার নাম ছিল যদুগোপাল চট্টোপাধ্যায়। এই ছেলে পরে শুনেছি জয়পুর কলেজের অধ্যাপক হন। এখনও তিনি জীবিত, মাঝে মাঝে তাঁর খবর পাই কিন্তু কোথায় যে কি করেন যদুদা’ এখন তা’ এতবার শুনেও কিছুতেই আমার মনে থাকে না। যদুগোপাল ছিল রোগা, শান্ত শিষ্ট, কোমল স্বভাবের স্বল্পভাষী ছেলে, মুখে থাকতো তার সর্ব্বদা হাসিটি লেগে।

৫১