পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

ডাতের শোকে মনে হতো সবাই আমার পরম শত্রু। ডাক্তাররা বলেছিল এ কাল রোগ থেকে ছেলেটি উঠবে একটা অঙ্গহানি নিয়ে, সেই থেকে আমার চোখের দৃষ্টি গিয়ে short sight এর ব্যাধি জীবনসঙ্গী হ’লো।

 এই সময়ে জীবনের এই দু’বছরে দেখেছি মায়ের সে কি আপ্রাণ চেষ্টা বাবাকে মদ ছাড়াতে, সুপথে আনতে। কলকেতা থেকে না বলে কয়ে হঠাৎ খুলনার বাড়ীতে এসে পড়তেন বাবার নৈতিক অনাচার ধরবার জন্যে। এই দৃপ্তা গরিয়সী মেয়েটির পদ্ম চোখের ভ্রূকুটি আর অশ্রুকে বাবা যে কি মর্ম্মান্তিক ভয়টা করতেন তা ছিল একটা দেখবার জিনিস। খুলনায় মা থাকলে বাবার হুইস্কির বোতল থাকতো মায়ের কাছে, অনেক কাকুতি মিনতি করে ভিক্ষাস্বরূপ দিনে এক আধ পেগ পেতেন। অর্থ, সম্পত্তি ও জীবিকার উপায়গুলি করায়ত্ত করে পুরুষ সমাজ নারীকে করে রেখেছে তার গলগ্রহ, অন্ন-বস্ত্রের জন্য তাদের একান্তই মুখাপেক্ষী; ভারতের মত দেশে নারী আবার শাস্ত্রে অনধিকারী, শিক্ষা-দীক্ষায় বঞ্চিত, পুরুষের অন্তঃপুরবন্দিনী অসূর্য্যম্পশ্যা ভোগপুত্তলী। তবু এত করে এত আট-ঘাট বেঁধেও পুরুষ তার স্বাভাবিক অর্দ্ধাঙ্গিনীকে সব ক্ষেত্রে পায়ের দাসখৎ লেখা দাসী করে উঠতে পারে নি। যেটুকু সঙ্কীর্ণ ক্ষেত্র আমরা তাদের দিয়েছি সেই অন্তঃপুরটুকুর মধ্যেই ওরা হয়ে রয়েছে নিজের শক্তি ও মহিমায় সম্রাজ্ঞী। বড় বড় কর্ত্তারা হাঁক-ডাক করে গৃহিণীর এই রাজ্যে অনধিকার চর্চ্চা করতে

৬০