পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

গিয়ে ল্যাজটি গুটিয়ে থোঁতা মুখ ভোঁতা করে ভাল মানুষের মত বাইরের ঘরে ফিরে এসে বসেন। মানুষের মাঝে—নারীর মাঝে কি একটা অপরাজেয় বস্তু আছে যাকে কিছুতেই এঁটে ওঠা যায় না। কত বড় বড় দাম্ভিকের দম্ভ চূর্ণ হয়ে গেছে ঐ স্ফটিকস্তম্ভে লেগে, মানুষকে বন্দী করবার ব্যর্থ প্রয়াসেরও শেষ নেই আর অবলীলায় অষ্টপাশ তার ছিঁড়ে ফেলে মানুষের মুক্ত হওয়ার ইতিহাসেরও অন্ত নেই।

 গোমস্ লেনের বাড়ীতে সংসারের কাজকর্ম্মের পালা সাঙ্গ করে অবসর বিনোদন হতো তাসের আড্ডা জমিয়ে, হারমনিয়ম বাজিয়ে আর নভেল পড়ে। মায়ের কাছে কেউ একজন বসে রমেশচন্দ্রের বা বঙ্কিমচন্দ্রের নভেলগুলি পড়তো আর মায়ের সঙ্গে আমরা শুনতুম। এইখানে আমার সত্তার গোপন পুরীর কল্পনা সুন্দরীর প্রথম জাগরণ, গল্পের মোহিনী শক্তির স্পর্শে গুপ্ত কবি ও চিত্রকরের প্রথম বিস্ময়মুগ্ধ চোখ মেলা। বাবা ছিলেন ষ্টার থিয়েটারের একজন পেট্রন; খুলনায় বাৎসরিক প্রদর্শনী ও উৎসব হ’তো, তা’তে ষ্টার থিয়েটারকে বাবা নিয়ে যেতেন টাকা খরচ করে। আমাদের একটি বক্স ষ্টারে বাঁধা ছিল। সেইখানে মায়ের কোল ঘেসে বসে আমার প্রথম নাটকাভিনয় দর্শন। তখন ভাল বুঝতুম না, সেই নৃত্যগীতমুখর আলোকমালা শোভিত রহস্য-পুরীর পটপরিবর্ত্তন মুগ্ধ স্পন্দিত হৃদয়ে বসে বসে দেখতুম আর ভাবতুম, “ওরা না পারে কি?” পরের সুখ

৬১