পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 আত্মীয়টি আমার গুরু গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, অবান্তর হাসি তাঁর শ্মশ্রুল মুখে কদাচিৎ উদয় হতো, বাজে কথা তিনি প্রাণান্তে বলতেন না। যেখানে তিনি বসতেন তার চারি ধারে বিশ হাত বেড়ে জায়গাটা গাম্ভীর্য্যে থম থম করতো, সেখানকার মানুষরা মনের ও প্রাণের গুমোটে দম আটকে পেট ফুলে মারা যাবার দাখিল হতো। তাঁর স্ত্রী ছিলেন জীর্ণা শীর্ণা রুক্ষ মেজাজের মানুষ, বাঁকা দৃষ্টি তাঁর খুঁজতো মানুষের ছিদ্র, অতি মাত্রায় মরাল মন তাঁর হিন্দু সমাজের সব কিছুকে দেখতো অসহিষ্ণু ঘৃণায়। পৌত্তলিক মানুষ ছিল এঁদের চোখে নিতান্ত কৃপার পাত্র, অন্ধকার থেকে আলোকে আনবার অভিশপ্ত আত্মা। এ বাড়ীর দুই মেয়ে ও এক ছেলে তখন নিতান্ত ছেলে মানুষ, তারাই ছিল আমাদের একমাত্র আনন্দের সাথী, তখনও দুনিয়ার ভাল মন্দের হিসাব-বুদ্ধি তাদের সরলতা নষ্ট করে নি। সে রাত্রে শুতে যাওয়া অবধি আমি অবিরাম কেঁদেছিলুম, রাঙা মাকে ছেড়ে আসবার ব্যথা আমার সারতে দশ পনর দিন লেগেছিল। তারপর পুজোর ছুটিতে আমরা গেলুম বৈদ্যনাথে—আমার মাতুলালয়ে, দিদিমা নিস্তারিণী দেবীর সংসারে দাদাবাবু ঋষি রাজ নারায়ণ তখন বেঁচে; বড় মামা, ছোট মামা, পাগল মেজ মামা, মা ও মাসী সবাই আছেন; মা রোহিণীতে আর বাদ বাকি সবাই পুরন্দাহার বাড়ীতে।

 বৈদ্যনাথ আমার শৈশবের কৈশোরের ও প্রথম যৌবনের সুখ

৮০