পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

নরক। আমি যখন তাঁকে দেখি তখন তিনি অতি বৃদ্ধা, একটি কাঠের গাড়ীতে তিনি বাস করতেন, ঘরের মত পরিসর সেই গাড়ীর মধ্যে ছিল তাঁর শোবার ঘর, রন্ধনশালা, লাইব্রেরী সবই। তাঁরই হাতে দীক্ষিত সাঁওতাল খৃশ্চান একজন তাঁকে ঐ গাড়ীতে করে টেনে নিয়ে বেড়াত; প্রকাও বাড়ী ও গির্জ্জার কাছে গাড়ীখানি সচরাচর দাঁড়িয়ে থাকতো। তিনি আমার দাদাবাবু রাজনারায়ণ বসুকে খৃষ্টধর্ম্মে দীক্ষিত করবার জন্যে আট দশ বছর চেষ্টা করেছিলেন, যখনই আসতেন তাঁকে ধর্ম্মোপদেশ দিতেন এবং যীশু প্রেম থেকে তাঁর বঞ্চিত দশা মনে করে সত্যি সত্যি ইনি অঝোরে কাঁদতেন। প্রায় ৭৫ কিম্বা ৮০ বছর অবধি তিনি বেঁচে ছিলেন; কোন এক সাঁওতালের কাছ থেকে কুষ্ঠ রোগের অদ্ভুত ওষুধ পেয়েছিলেন, খৃশ্চান হবার প্রতিশ্রুতি পেলেই রোগীকে নিজের নন্দন পাহাড়ের কাছে কুষ্ঠাশ্রমে রেখে সারিয়ে দিতেন, তারাও তখন তাঁর গাড়ীখানি দূর থেকে আসছে দেখে নিজেদের গ্রামের দিকে সরে পড়তো, কারণ রোগ তখন সেরে গেছে, আর বৃথা খৃষ্টান হয়ে কি লাভ। বার বার ঠকেও আবার তিনি নতুন নতুন মানুষকে ঐ সর্ত্তে ওষুধ দিতেন, ‘খৃশ্চান হবো’ বলে তাঁর কাছে না পাওয়া যেত এমন দুর্লভ বস্তু কিছুই ছিল না।

 দেওঘরে এসে রাঙা মায়ের সঙ্গে আমাদের বিচ্ছেদ হলো, কলকেতায় যে এক মাস ছিলুম সেখানেও দেখা হয় নি।

৮২