পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

মানুষের মন প্রাণ হচ্ছে আনন্দের পোকা, শোক দুঃখ তার প্রকৃতির ব্যতিক্রম, তাই শোকের বা দুঃখের পুঁটলি আঁকড়ে সে বেশীদিন থাকতে পারে না। দিন গেলে সে আবার হাসে, আবার ঘরকন্না পাতে, আবার নতুন নতুন মানুষকে হৃদয় প্রাণ নতুন করে দিয়ে ফেলে। আনন্দ হাসি সুখ শান্তিই মানুষের রসঘন সত্তার আসল খোরাক; দুঃখ তার প্রকৃতির এতই বিরোধী যে বেশী দিন শোক দুঃখকে ধরে থাকলে তার মন স্বাভাবিক গতি হারিয়ে পাগল হয়ে যায়, দেহ ভেঙ্গে পড়ে। আমাদের সত্তার আঁধার পুরীতে কিন্তু (sub conscious) এমন বিকৃতি আছে এবং এমন morbid দিকও আছে যার মাঝে রয়েছে শোক দুঃখ ও বিপদ আপদের আগুনের দিকে টান। মা যখন বহু আগে মরা ছেলের জন্যে নিজ কাজকর্ম্মের অবসরে পা ছড়িয়ে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদে তখন তার এই বিকৃত morbid মন সেই দুঃখের ঝাল আচারটুকু জীবে রেখে নেড়ে নেড়ে চাখে, ভোগ করে। ‘আমি বড় দুঃখী গো, আমার সর্ব্বনাশ হয়েছে গো’ এই কথা দশ জনকে ডেকে বলায় সুখ আছে, আগুনের প্রতি পতঙ্গের টানের মত মরণ বা অকল্যাণের দিকেও মানুষের একটা লোভ ও টান আছে। মৃত্যুর দুয়ারের কাছাকাছি ঘুরে বেড়াবার নেশায়ই শিকারী বাঘের গুহায় যায়, যোদ্ধা যুদ্ধ করে, পরোপকারী বিপন্নকে উদ্ধার করতে আগুনে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু শোকের আঁধার ছায়া মানুষের সহজ আনন্দঘন রসস্বরূপ যে সত্তা তার বিরোধী।

৮৩