পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 মায়ের কাছ ছাড়া হবার দুঃখও আমাকে বেশি দিন বেঁধে নি। রাঙা মা আমাকে অতখানি আত্ম-বিস্তৃত হয়ে ভাল বাসতেন বলেই বোধ হয় একটা ভাসা ভাসা টান তাঁর ওপর আমারও হয়েছিল, কারণ ভালবাসায় আত্মতৃপ্তি আছে, সুখ আছে, পরম আরাম আছে। মানুষের আত্মম্ভরিতা ওতে সুখ পায়। শেষের জীবনে দেখেছি মায়ের প্রতি ভালবাসা আমার আদৌ গভীর নয়, একটা কর্ত্তব্য বুদ্ধি আমাকে তাঁর দিকে সজাগ রাখতো মাত্র। একবার খুব পীড়িত হয়ে পড়ে তাঁর শেষ দিন এসেছে ভেবে বাবা আমাকে তাঁর মৃত্যু শিয়রে ডেকে বললেন, “দেখো, আমি মলে সবাই তোমার মাকে ত্যাগ করবে, তুমি কিন্তু ওকে ত্যাগ করো না, আমাকে কথা দাও।” তাঁর মাথা ছুঁয়ে আমি কথা দিয়েছিলুম। দেওঘরে এসে বড় মামা যোগীন্দ্রনাথ বসুকে ও মাতামহ রাজনারায়ণ বাবুকে আমার অভিভাবক রূপে পেয়ে আমি বেঁচে গেলুম। কারণ এঁরা দুজনেই আমুদে রসিক লোক, আমার এঁরা হলেন বন্ধু, অভিভাবক—সে কেবল নামে মাত্র।

 দেওঘরের বাড়ী এখনও জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, আর কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো ভেঙে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সে যুগে ঋষি রাজনারায়ণ একটি কম মানুষ ছিলেন না, তাঁর “হিন্দু ধর্ম্মের শ্রেষ্ঠত।” নামে বক্তৃতায় বাংলা দেশের মনের ধারা ফিরে গিয়েছিল, ইংরাজি শিক্ষিতদের সাহেবী ধরণ ধারণের লোভ আর খৃশ্চান হবার হিড়িক থেমে গেছিল যে কজন দেশ-

৮৪