পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 আমায় প্রথম যে দিন বড় মামা সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন স্কুলে ভর্ত্তি করার জন্যে সে দিন আমার বুকের মাঝে ভয়ের কি গুরুগুরু—যেন বলিদানের জন্যে পাঁঠাকে পরম করুণাময়ী মা কালীর কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্কুল কি তা’ সে পর্য্যন্ত কখনও চোখে দেখা হয় নি, ভয়াবহ রকম গম্ভীর উদ্যতবেত্র মাষ্টারের দল, চারিদিকে অচেনা মুখ এবং পড়ার অপ্রীতিকর পিঠ-মাজা-ভাঙ্গা চাপ এই সবগুলো নিয়ে একটা ভীতিপ্রদ ধারণা শুনে শুনে মনের অন্ধকারে ব্রহ্মদৈত্যের মত জমা হয়েছিল। প্রথমে অফিসে হেড মাষ্টার মশাইকে দেখলুম—বেঁটে ক্ষীণকায় গৌরকান্তি শান্ত গম্ভীর মানুষটি, হাসেনও বেশ আবার সে হাসিখুসীর মাঝে গাম্ভীর্য্য এবং ওজনও রাখতে জানেন। আমাকে দু’চারটি প্রশ্ন করে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্ত্তি করে নিলেন এবং সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ জন অজানা ছেলের মাঝে বসিয়ে দিয়ে এলেন। তখন বোধ হয় পণ্ডিত মশাইএর ক্লাস; পোড়া বৃষকাষ্ঠের মত কালো শীর্ণ পুরুষ, রক্তচক্ষু, গোঁফ ও ছাগল দাড়ি আছে, সদাই নিদ্রালু এবং রুক্ষভাষী। এই ছিলেন পণ্ডিত মশাই। তিনি পড়া জিজ্ঞেস করছেন উপক্রমণিকা ব্যাকরণের আর মুহুর্মূহু বিদ্রূপবাণ ও তিরস্কারের মধ্যে ছেলেরা বেঞ্চিতে আসন বদল করে উন্নতি অধোগতির নাগরদোলায় দুলছে। সেই যে পণ্ডিতমশাইকে বিষ চোখে দেখলুম আর কখনও সে স্মৃতির দাগ মন প্রাণ থেকে মোছে নি। নিজের রকমে তিনি স্নেহপ্রবণও যে না ছিলেন তা’ নয় কিন্তু তাঁর

৮৭